নেতিবাচক মনোভাবের মানুষ চেনার ৭ কৌশল – বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত গাইড
নেতিবাচক মনোভাবের মানুষ চেনার ৭ কৌশল বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা
এ আর্টিকেলে আমরা দেখব-কিভাবে আপনার চারপাশে থাকা এমন মানুষদের চিহ্নিত করবেন এবং কোন লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন যে কেউ আস্তে আস্তে আপনার শক্তি শুষে নিচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ নতুন বছরে নিজেকে পরিবর্তন করুন ! নতুন পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ও সফলতার কৌশল
১। সব পরিস্থিতির খারাপ দিকটাই আগে দেখেন
নেতিবাচক মনোভাবের মানুষের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো-যে বিষয়ই ঘটুক না কেন, তারা আগে খারাপ দিকটা দেখে।
আপনি যদি ভালো কোনো খবরও দেন, তারা বলবেন-
-
“এতে আবার সমস্যা হতে পারে।”
-
“দেখি কতদিন টিকে!”
এ ধরনের মনোভাব ধীরে ধীরে আপনার নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও ক্ষুণ্ন করে ফেলতে পারে।
কেন খারাপ?
কারণ এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমে, ইতিবাচক শক্তি নষ্ট হয় এবং ভালো সুযোগগুলোও ঝুঁকি মনে হতে শুরু করে।
২। সবসময় অভিযোগ করতে পছন্দ করেন
নেতিবাচক মানুষদের পৃথিবীতে যেন কোনও ভালো জিনিস নেই।
বৃষ্টি হলে সমস্যা, রোদ হলে সমস্যা, অফিসে সমস্যা, পরিবারেও সমস্যা-
তাদের কাছে অভিযোগ করাই যেন জীবনযাপনের অংশ।
আপনি কিভাবে বুঝবেন?
সেদিন যদি আপনি তাদের সাথে পাঁচ মিনিটও থাকেন, দেখবেন অন্তত তিন–চারটি বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
৩। অন্যের সাফল্য হজম করতে পারেন না
আপনি কিছু ভালো করলে তারা আনন্দিত না হয়ে-
-
কৃতিত্ব কমিয়ে বলে,
-
অন্য কারণ দেখিয়ে ছোট করে,
-
বা ঈর্ষা লুকাতে না পেরে ব্যঙ্গ করে।
উদাহরণঃ
আপনি নতুন একটি চাকরি পেলে তারা বলবে - “চাকরিটা কতদিন রাখতে পারবে দেখি!”
এ ধরনের কথা দীর্ঘমেয়াদে আত্মসম্মান ও প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৪। সমর্থন নয়-সবসময় দোষ খুঁজে বের করেন
আপনি সাহায্য চাইলে উৎসাহ না দিয়ে বরং কোথায় ভুল হতে পারে সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করেন।
এরা কোনো পরিকল্পনায় উৎসাহ দিতে পারে না।
এদের আচরণ বলেঃ
-
“এটা সম্ভব না।”
-
“তুমি পারবে না।”
-
“ঝামেলা হবে।”
যা আপনার মনোবলকে নষ্ট করে।
৫। সবকিছুকেই অতিরিক্ত ব্যক্তিগতভাবে নেন
নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ খুবই সংবেদনশীল। সামান্য কথাতেও তারা মনে কষ্ট পায় এবং আপনার কথাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। ফলে সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে।
কেন এটা ঘটে?
তাদের আত্মবিশ্বাস কম, তাই তারা সবসময় মনে করে-কেউ না কেউ তাদের বিরুদ্ধে আছে।
৬। সমস্যা তৈরি করতে আনন্দ পান
যেখানেই যান সেখানে অকারণে ড্রামা, ভুল বোঝাবুঝি বা বিতর্ক তৈরি করে। এদের উপস্থিতি থাকলে একটি শান্ত পরিবেশও দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যায়।
লক্ষণঃ
-
কথা বাড়ানো
-
কথার অর্থ বদলে বলা
-
পেছনে কথা বলা
এগুলো নেতিবাচক মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস।
৭। কারো উন্নতি দেখলে ভয় বা হুমকি মনে করে
নেতিবাচক মানুষরা অন্যের উন্নতিতে নিজেদের ছোট মনে করে। তাই তারা চেষ্টা করে-
-
আপনাকে নিরুৎসাহিত করতে
-
ভুল পথে চালাতে
-
সন্দেহ সৃষ্টি করতে
তাদের উদ্দেশ্য আপনাকে সরাসরি ক্ষতি করা নয়, বরং নিজেদের নিরাপদ বোধ করা।
আরো পড়ুনঃ পুরুষদের ৮টি বদ অভ্যাস ও এর ভয়াবহ প্রভাব | স্বাস্থ্য ও মানসিক জীবনে এর প্রভাব জানুন
নেতিবাচক মানুষ চেনার উপায়
নেতিবাচক মানুষ চেনা আসলে কঠিন নয়, যদি কিছু সূক্ষ্ম আচরণ লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত তারা প্রতিটি বিষয়েই খারাপ দিক তুলে ধরতে পছন্দ করে এবং অকারণে অভিযোগ করতে করতে পরিবেশ ভারী করে তোলে। তাদের কথাবার্তায় সবসময় হতাশার সুর থাকে, যেন পৃথিবীতে ভালো কিছু ঘটতেই পারে না। এমন মানুষরা অন্যের সাফল্য সহজে মেনে নিতে পারেন না এবং আনন্দের মুহূর্তেও সন্দেহ বা সমালোচনা খুঁজে বের করেন।
তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো-কোনো পরিকল্পনা বা উদ্যোগে উৎসাহ না দিয়ে বরং কোথায় ভুল হতে পারে সেটিই আগে মনে করিয়ে দেওয়া। ফলে আপনার নিজের আত্মবিশ্বাসও কমতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে তারা ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা সম্পর্ককে অযথা জটিল করে তোলে। এসব আচরণই ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দেয়, যার সঙ্গে আপনি মিশছেন সে ইতিবাচক মানুষ নয়; বরং তার নেতিবাচক মনোভাব আপনার মানসিক শান্তিকে নষ্ট করতে পারে।
এই লক্ষণগুলো নজরে রাখলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, কার সাথে দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন এবং কার সাথে নয়।
নেতিবাচক মনোভাবের মানুষদের থেকে নিজেকে বাঁচানোর উপায়
- শোনা কমিয়ে দিন
সম্পর্ক না ভাঙলেও তাদের নেতিবাচক কথায় কম সময় ব্যয় করুন।
- সীমা নির্ধারণ করুন
কিছু আচরণ আপনি গ্রহণ করবেন না-এটি ভদ্রভাবে বুঝিয়ে দিন।
- নিজের মনোভাব শক্ত রাখুন
ইতিবাচক মানুষ, বই, আলোচনা-এসবের সাথে সময় কাটান।
- অযথা যুক্তিতে যাবেন না
তাদের সঙ্গে তর্ক করলে বিষয় আরও খারাপ হয়।
- নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন
কারো কথা যদি আপনাকে কষ্ট দেয়, সেটি স্বাভাবিকভাবে স্বীকার করুন এবং দূরত্ব বজায় রাখুন।
নেতিবাচক মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলার কৌশল
নেতিবাচক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বা কাজ করতে গেলে সচেতন থাকা খুব জরুরি। প্রথমে নিজেদের মানসিক শান্তি বজায় রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে তাদের নেতিবাচক প্রভাব গ্রহণ না করুন। প্রয়োজন হলে দূরত্ব বজায় রাখা বা সীমা নির্ধারণ করুন। সম্পর্ক যদি অপরিহার্য হয়, তাহলে স্পষ্ট নিয়ম ও সীমারেখা ঠিক করা সবচেয়ে কার্যকর।
তাদের পরিবর্তন সম্ভব, তবে শুধুমাত্র তখনই যখন তারা নিজেরাই সত্যিকারভাবে বদলানোর ইচ্ছা দেখায়। জোর করে কাউকে বদলানো সম্ভব নয়। তাই নেতিবাচকতা মোকাবিলায় ধৈর্য, সচেতনতা এবং নিজের মানসিক সুস্থতা রক্ষা করা মূল।
আরো পড়ুনঃ অলস ও নিষ্ফলা মানুষদের ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
নেতিবাচক মনোভাবের মানুষ চেনার কৌশল সাধারণ প্রশ্নোত্তর
১) নেতিবাচক মানুষকে পুরোপুরি দূরে রাখা কি উচিত?
সবসময় নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী দূরত্ব রাখা ভালো। তবে সম্পর্ক জরুরি হলে সীমা নির্ধারণই শ্রেষ্ঠ উপায়।
২) নেতিবাচক মানুষ কি পরিবর্তন হতে পারে?
হ্যাঁ, পারে। তবে পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন তারা নিজেরাই পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
৩) যদি অফিসে এমন কেউ থাকে, কী করব?
পেশাদার দূরত্ব বজায় রাখুন। কাজের বাইরে অপ্রয়োজনীয় আলাপ এড়িয়ে চলুন।
৪) নেতিবাচক বন্ধুকে কি ছাড়তে হবে?
বন্ধুত্ব যদি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করে-তাহলে উপযুক্ত দূরত্ব রাখা প্রয়োজন।
৫) দীর্ঘদিন নেতিবাচক মানুষের সাথে থাকলে কি প্রভাব পড়ে?
হ্যাঁ, পড়ে। আত্মবিশ্বাস কমে, মন খারাপ থাকে এবং জীবনের ইতিবাচকতা হারিয়ে যেতে থাকে।
শেষ কথা
নেতিবাচক মানুষ চেনার এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই কারা আপনার জীবনে অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করছে তা বুঝতে পারবেন। এতে একদিকে যেমন অকারণ মানসিক ক্লান্তি কমবে, তেমনি নিজের চারপাশে ইতিবাচক পরিবেশও বজায় রাখা সহজ হবে। তাই যাদের মনোভাব আপনাকে দুর্বল করে বা বারবার ভুল পথে টেনে নেয়-তাদের প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে দূরে থাকুন। নিজের মানসিক শান্তি রক্ষা করুন, ইতিবাচক মানুষদের সাথে সময় কাটান এবং আরও ভারসাম্যপূর্ণ, সুখী ও আত্মবিশ্বাসী জীবন গড়ে তুলুন।
[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন]
কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানাবেন।
আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের সাইটে https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url