ডাকসুর ইতিহাস, কার্যক্রম ও গুরুত্ব ! শিক্ষার্থীর চোখে এক গৌরবময় যাত্রা
ডাকসুর ইতিহাস, কার্যক্রম ও গুরুত্ব ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভূমিকা
আপনারা যারা "ডাকসুর ইতিহাস, কার্যক্রম ও গুরুত্ব ! শিক্ষার্থীর চোখে এক গৌরবময় যাত্রা" এই সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, ভাত না রুটি – কোনটা স্বাস্থ্যকর? আটা বা ময়দার রুটির চেয়ে ভাত খাওয়ার উপকারিতা জানুন। ভাতে থাকা পুষ্টিগুণ, সহজ হজম, শক্তি ও স্বাস্থ্যের জন্য কেন ভাত ভালো তা বিস্তারিত।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, আটা বা ময়দার রুটির চেয়ে ভাত খাওয়া কেন ভালো? স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একটি অনন্য নাম হলো ডাকসু। "ডাকসু" শব্দটির পূর্ণরূপ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এটি শুধু একটি ছাত্র সংসদ নয়, বরং গণতান্ত্রিক চর্চা, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, এবং জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক আন্দোলন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাই আজকের প্রজন্মের জন্য ডাকসুর ইতিহাস, কার্যক্রম ও গুরুত্ব জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ! শিক্ষা, ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।
এক শিক্ষার্থীর চোখে ডাকসু
ভাবুন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকটাক ক্লাস, টিএসসি’র আড্ডা আর ক্যাম্পাস জীবনের উচ্ছ্বাসের মাঝেই আপনি হঠাৎ শুনলেন—“ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে!”। মনে একরকম রোমাঞ্চ। কারণ ডাকসু মানে শুধু ছাত্র সংসদ নয়, বরং একটি ইতিহাস, একটি আন্দোলন, একটি স্বপ্নের নাম।
ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) বাংলাদেশের ছাত্র-রাজনীতি ও জাতীয় আন্দোলনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন হয় না, বরং দেশের বড় বড় আন্দোলনের শেকড়ও এখান থেকে গজিয়েছে।
ডাকসুর ইতিহাসঃ সময়ের গহীনে ফিরে দেখা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। তবে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে ডাকসুর যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৩ সালে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ডাকসু হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার মঞ্চ।
১। সূচনা ও প্রতিষ্ঠা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর কার্যক্রম শুরু হয়।
২। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
১৯৪৮ সাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। যদিও ডাকসুর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল পরে, তবে ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামো ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই দৃঢ় হয়েছিল। পরবর্তীতে ডাকসু সেই ধারাকে আরো সুসংগঠিত করে।
৩। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ডাকসু
১৯৬০ ও ৭০ দশকে ডাকসু জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ডাকসু শুধু ক্যাম্পাসের সংগঠন থাকেনি। ডাকসুর নেতারা অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার দাবি, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র সমাজ যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তার কেন্দ্রীয় মঞ্চ ছিল ডাকসু। বলা হয়, ডাকসু ছিল মুক্তিকামী চেতনার এক শক্তিশালী কেন্দ্র।
৪। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়
স্বাধীনতার পর ডাকসু রাজনৈতিক চর্চা ও নেতৃত্ব তৈরির প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তবে একাধিকবার নির্বাচন স্থগিত হওয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ডাকসুর কার্যক্রম নানা সময়ে স্থবির হয়ে পড়ে।
৫। সাম্প্রতিক ইতিহাস
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। প্রায় ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পান। তবে নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। এর পর থেকে ডাকসুর নির্বাচন আর হয়নি, যদিও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
ডাকসুর কার্যক্রমঃ শিক্ষার্থীর অধিকার থেকে জাতীয় আন্দোলন
একজন সাধারণ শিক্ষার্থী যখন ডাকসুর দিকে তাকায়, তখন সে মূলত তিনটি বিষয় প্রত্যাশা করেঃ
শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা – ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট, টিউশন ফি বৃদ্ধি, খাদ্য সমস্যা, ছাত্রাবাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা ,শিক্ষার্থীদের খাদ্য, আবাসন ও চিকিৎসার দাবি উত্থাপন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এইসব ইস্যুতে ডাকসু সবসময় শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর।
সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম –বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন- বিতর্ক, নাটক, ক্রীড়া, সাহিত্যচর্চা উৎসাহিত করা—এসব আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নধর্মী নেতৃত্ব ও দক্ষতা তৈরি করে।
-
জাতীয় আন্দোলনে ভূমিকা – একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান, জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করা—সবক্ষেত্রেই ডাকসুর ডাক ছিল শিক্ষার্থীদের ঐক্যের প্রতীক।
কেন ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ?
একজন নবীন শিক্ষার্থী যখন ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়, তখন হয়তো সে ভাবে—“ডাকসু তো শুধু নির্বাচন করে, এতে আমার কী লাভ?” কিন্তু ইতিহাস জানলে বোঝা যায়, ডাকসু আসলে ছিল—
-
গণতন্ত্র শেখার স্কুল – ভোট, প্রার্থী, প্রচারণা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা—সব মিলিয়ে এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার প্ল্যাটফর্ম।
-
ভবিষ্যৎ নেতাদের কারখানা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে অনেক জাতীয় নেতা ডাকসুর ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে আসেন।
-
অধিকার আন্দোলনের ঢাল – বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ডাকসু সবসময়ই সামনে থেকেছে।
-
জাতীয় চেতনার কেন্দ্র – দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে ডাকসুর নাম জড়িয়ে আছে।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
যদিও ডাকসুর ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল, তবে এটি নানা সময় সমালোচনার মুখেও পড়েছে। সত্যিটা হলো—আজকের প্রজন্ম ডাকসুকে আগের মতো প্রাণবন্ত মনে করে না। কারণ—
-
নিয়মিত নির্বাচন হয় না
-
রাজনৈতিক প্রভাব ও দলীয়করণ বেড়েছে
-
শিক্ষার্থীরা আস্থা হারাচ্ছে
-
কখনও কখনও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে
এগুলোই ডাকসুকে বারবার দুর্বল করে দিয়েছে। এসব সমস্যার কারণে ডাকসুর কার্যক্রম বারবার স্থবির হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কি? কাদের জন্য? বিস্তারিত গাইড ২০২৫
উপসংহারঃ ডাকসুর পুনর্জাগরণের প্রয়োজন
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, ডাকসুর ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি শুধু একটি ছাত্র সংসদ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব তৈরি, জাতীয় আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা শেখার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে নিয়মিত নির্বাচন, স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
আজকের এক শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে ভাবে—“আমার জন্য ডাকসু কী করছে?”—তাহলে উত্তরটি পরিষ্কার হতে হবে। ডাকসুকে হতে হবে শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর, অধিকার রক্ষার ঢাল, আর জাতীয় গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা।
ডাকসুর ইতিহাস আমাদের শেখায়—একটি ছাত্র সংসদ কেবল ভোট আর মিছিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্র। তাই ডাকসুর নিয়মিত নির্বাচন, স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url