স্মার্টফোন কিনবেন? কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো!
স্মার্টফোন কিনবেন? কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো!
আপনারা যারা "স্মার্টফোন কিনবেন? কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো!" এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, স্মার্টফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা জরুরি-প্রসেসর, র্যাম, ব্যাটারি, ক্যামেরা, স্টোরেজ, ডিসপ্লে, অপারেটিং সিস্টেম এবং বাজেট। এই গাইডে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে কোন কোন দিক দেখে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি সঠিক স্মার্টফোনটি বেছে নিতে পারবেন। নতুন ফোন কেনার আগে অবশ্যই পড়ে নিন।
চলুন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নেই, স্মার্টফোন কেনার আগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকাঃ
স্মার্টফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের স্মার্টফোন থাকায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সঠিক স্মার্টফোনটি বেছে নিতে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ গরমে স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হলে করণীয় ! মোবাইল হিট প্রতিরোধের উপায়সমূহ জেনে নিন।
১। বাজেট নির্ধারণ করুন
সবার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনার বাজেট। স্মার্টফোনের দাম সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত:
- এন্ট্রি-লেভেল (১০,০০০ - ২০,০০০ টাকা): সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
- মিড-রেঞ্জ (২০,০০০ - ৫০,০০০ টাকা): ভালো পারফরম্যান্স ও ক্যামেরা চাচ্ছেন? এই রেঞ্জে অনেক ভালো অপশন আছে।
- ফ্ল্যাগশিপ (৫০,০০০+ টাকা): সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স ও প্রিমিয়াম ফিচারের জন্য।
২। প্রসেসর ও পারফরম্যান্স
স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স নির্ভর করে এর প্রসেসরের ওপর। কিছু জনপ্রিয় প্রসেসর হলো:
- কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন: ভালো পারফরম্যান্স, গেমিং ও ব্যাটারি অপটিমাইজেশনের জন্য উপযুক্ত।
- মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি: বাজেট-ফ্রেন্ডলি, মিড-রেঞ্জের জন্য ভালো।
- অ্যাপল এ-সিরিজ: iPhone-এ ব্যবহৃত হয়, যা অত্যন্ত শক্তিশালী।
- স্যামসাং এক্সিনস: স্যামসাং ফোনে ব্যবহৃত হয়, মিড-রেঞ্জ ও ফ্ল্যাগশিপে ভিন্ন পারফরম্যান্স দেয়।
যদি আপনি গেমিং বা মাল্টিটাস্কিং করতে চান, তাহলে অন্তত Snapdragon 7 সিরিজ বা Dimensity 8000 সিরিজের চিপসেট নির্বাচন করুন।
৩। র্যাম ও স্টোরেজ
স্মার্টফোনে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত র্যাম ও স্টোরেজ থাকা জরুরি।
- ৪GB র্যাম: সাধারণ ব্যবহারের জন্য
- ৬GB/৮GB র্যাম: মাল্টিটাস্কিং ও গেমিংয়ের জন্য
- ১২GB+ র্যাম: এক্সট্রিম গেমিং ও হেভি ইউজারদের জন্য
স্টোরেজের ক্ষেত্রে, বর্তমানে ১২৮GB স্টোরেজ স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরা হয়, তবে যদি আপনার বেশি ছবি, ভিডিও বা অ্যাপ সংরক্ষণ করার দরকার হয়, তাহলে ২৫৬GB বা ৫১২GB বেছে নেওয়া ভালো।
৪। ডিসপ্লের গুণগত মান
একটি ভালো ডিসপ্লে শুধু ভিডিও দেখা বা গেম খেলার অভিজ্ঞতাই উন্নত করে না, বরং চোখের জন্যও আরামদায়ক হয়।
- IPS LCD: বাজেট ফোনে বেশি দেখা যায়, তবে রঙের গভীরতা কম।
- AMOLED / OLED: গাঢ় কালো, উজ্জ্বল রঙ ও ভালো কন্ট্রাস্ট দেয়।
- 120Hz / 144Hz রিফ্রেশ রেট: স্ক্রলিং ও গেমিংয়ের জন্য স্মুথ অভিজ্ঞতা দেয়।
যদি আপনি ভালো কালার ও ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল চান, তাহলে AMOLED ডিসপ্লে নির্বাচন করুন।
৫। ক্যামেরা পারফরম্যান্স
স্মার্টফোন ক্যামেরা শুধু মেগাপিক্সেল নির্ভর নয়, বরং সেন্সর, অ্যাপারচার ও সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনও গুরুত্বপূর্ণ।
- ১২MP বা ৫০MP (ফ্ল্যাগশিপ ফোনে): ভালো সেন্সর থাকলে অসাধারণ ছবি তুলতে সক্ষম।
- ৬৪MP বা ১০৮MP: বড় সেন্সর থাকলে ভালো ছবি তোলা যায়।
- OIS (Optical Image Stabilization): স্টেডি ভিডিও ও লো-লাইট ফটোগ্রাফির জন্য দরকারি।
- আল্ট্রা-ওয়াইড, ম্যাক্রো ও টেলিফটো লেন্স: বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফির জন্য কার্যকরী।
যদি আপনি ভালো ফটোগ্রাফি করতে চান, তাহলে Sony IMX766 বা Samsung GN1 সেন্সরযুক্ত ফোন বেছে নিন।
৬। ব্যাটারি ও চার্জিং স্পিড
দীর্ঘ সময়ের ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়ার জন্য বড় ব্যাটারি ও দ্রুত চার্জিং সাপোর্ট থাকা জরুরি।
- ৫০০০mAh বা তার বেশি: লম্বা সময় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
- ৬৭W / ১০০W ফাস্ট চার্জিং: দ্রুত চার্জ হওয়ার সুবিধা দেয়।
- ওয়্যারলেস চার্জিং: প্রিমিয়াম ফোনে সাধারণত থাকে।
যদি সারাদিন ফোন ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৫০০০mAh ব্যাটারি ও অন্তত ৩৩W ফাস্ট চার্জিং থাকা ফোন বেছে নিন।
আরো পড়ুনঃ চোখের ইশারায় চলবে স্মার্টফোন! প্রযুক্তিতে নতুন যুগের হাতছানি।
৭। অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার আপডেট
স্মার্টফোনের সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা নির্ভর করে এর অপারেটিং সিস্টেমের ওপর।
- অ্যান্ড্রয়েড (One UI, MIUI, OxygenOS, FuntouchOS ইত্যাদি)
- iOS (iPhone-এর জন্য, লং-টার্ম আপডেট ও ভালো অপ্টিমাইজেশন)
আপনার যদি নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট দরকার হয়, তাহলে Google Pixel, Samsung বা iPhone বেছে নিন, কারণ তারা দীর্ঘমেয়াদী আপডেট সরবরাহ করে।
৮। ৫জি ও কানেক্টিভিটি অপশন
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ৫জি সাপোর্ট আছে কিনা তা দেখা উচিত। এছাড়াও,
- Wi-Fi 6 বা 6E: দ্রুত ইন্টারনেটের জন্য
- NFC: সহজ পেমেন্ট ট্রান্সাকশনের জন্য
- ব্লুটুথ ৫.২ বা তার বেশি: ভালো ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির জন্য
৯। বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন
ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি টেকসই হবে কিনা নির্ভর করে এর উপাদানের ওপর।
- প্লাস্টিক বডি: বাজেট ফোনে বেশি দেখা যায়।
- গ্লাস বা মেটাল বডি: প্রিমিয়াম অনুভূতি দেয় ও টেকসই হয়।
- IP রেটিং: পানি ও ধুলা প্রতিরোধের জন্য (IP67/IP68 ভালো)।
১০। ব্র্যান্ড ও বিক্রয়োত্তর সেবা
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড থেকে কেনার চেষ্টা করুন, যেন ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সুবিধা সহজে পান। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- Samsung (দীর্ঘমেয়াদী আপডেট ও ভালো সার্ভিস)
- Apple (iPhone) (সেরা পারফরম্যান্স ও সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন)
- Xiaomi / Redmi / POCO (ভ্যালু ফর মানি)
- OnePlus (ফাস্ট পারফরম্যান্স ও স্টক অ্যান্ড্রয়েডের কাছাকাছি অভিজ্ঞতা)
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, স্মার্টফোন কেনার আগে আপনার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন। যদি আপনি গেমার হন, তাহলে শক্তিশালী প্রসেসর ও ভালো রিফ্রেশ রেটযুক্ত ফোন নিন। ফটোগ্রাফির জন্য ভালো ক্যামেরা সেন্সর ও OIS সহ ফোন বেছে নিন। ব্যাটারি ব্যাকআপ গুরুত্বপূর্ণ হলে বড় ব্যাটারির ফোন নিন।
আপনার বাজেট অনুযায়ী স্মার্টফোন বেছে নিলে ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন!
যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url