চোখের ইশারায় চলবে স্মার্টফোন! প্রযুক্তিতে নতুন যুগের হাতছানি।
চোখের ইশারায় চলবে স্মার্টফোন! প্রযুক্তিতে নতুন যুগের হাতছানি।
আপনারা যারা "চোখের ইশারায় চলবে স্মার্টফোন" এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, চোখের ইশারায় মোবাইল চালানো এখন আর কল্পনা নয়। AI, Eye Tracking ও Accessibility টেকনোলজি মিলিয়ে কীভাবে স্মার্টফোনের ব্যবহার বদলে যাচ্ছে, জানুন এই আর্টিকেলে।
চলুন এই আর্টিকেলে আজ আমরা জেনে নিই, চোখ দিয়ে মোবাইল চালানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সম্পর্কে।
চোখের ইশারায় স্মার্টফোন! - শুরুটা যেন সিনেমার কল্পনা
আমরা অনেক সময় হলিউড সিনেমায় দেখি, কোনো চরিত্র চোখের ইশারায় কম্পিউটার চালাচ্ছে, দরজা খুলছে কিংবা ড্রোন উড়াচ্ছে। কিন্তু এখন এসব শুধু সিনেমায় না, বাস্তবেও সম্ভব হয়ে উঠছে। চোখের মুভমেন্ট বা গেজ (gaze) দিয়ে স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করার প্রযুক্তি এখন ধীরে ধীরে বাস্তবের রূপ নিচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ বেশি খরচ করছে এই ১০ অ্যাপ বিস্তারিত জেনে নিন।
বিশেষ করে যারা হাত দিয়ে ফোন চালাতে পারেন না, তাদের জন্য এটি এক বিশাল আশীর্বাদ। আবার ভবিষ্যতে এটাই হতে পারে স্মার্টফোন ব্যবহার করার সবচেয়ে আধুনিক এবং সহজতম মাধ্যম।
কীভাবে কাজ করে এই “Eye Control” টেকনোলজি?
চোখের ইশারায় ফোন চালানোর জন্য মূলত তিনটি প্রযুক্তি একসাথে কাজ করে। নিচে প্রযুক্তি গুলো ও তার কাজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলোঃ
১। আই ট্র্যাকিং সেন্সরঃ (Eye Tracking Sensor)
ফোনের সামনে থাকা ক্যামেরা আপনার চোখের গতি শনাক্ত করে।
২। এআই ও মেশিন লার্নিংঃ (AI & Machine Learning)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বুঝে নেয় আপনি কোনদিকে তাকাচ্ছেন এবং কী করতে চান।
৩। অঙ্গভঙ্গি ম্যাপিংঃ (Gesture Mapping)
যেমন আপনি ডানদিকে তাকালে স্ক্রল ডানে যাবে, উপরে তাকালে স্ক্রল উপরে যাবে ইত্যাদি।
অনেকক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেন্সরযুক্ত স্মার্ট গ্লাস বা হেডসেট ব্যবহার করেও এই Eye Control করা হয়।
কোন কোন স্মার্টফোনে পাওয়া যাচ্ছে এই সুবিধা?
বর্তমানে কিছু কোম্পানির বিশেষ ব্র্যান্ড তাদের ডিভাইসে এই সুবিধা দিতে শুরু করেছেঃ
-
স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজ Samsung Galaxy (One UI accessibility):
চোখ সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য (Eye detection features) রয়েছে। -
আপেল Apple (iOS Accessibility):
আইফোন (iPhone) ও আইপ্যাড (iPad)-এ “Eye Tracking” সাপোর্ট দেয় Visually Impaired ইউজারদের জন্য। -
গুগল পিক্সেলঃ (Google Pixel)
গুগল পিক্সেল (Google Pixel) ফোনে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাক্সেসিবিলিটি স্যুট (Android Accessibility Suite) ব্যবহার করে চোখ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
-
বিশেষ অ্যাপঃ
ইভা ফেসিয়াল মাউসঃ EVA Facial Mouse
গেজরেকর্ডারঃ GazeRecorder
ভায়াকা সক্ষম করুনঃ Enable Viaca
এইসব অ্যাপ দিয়ে পুরানো ফোনেও কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়।
কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন?
১। প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারী (Physically challenged):চোখের ইশারায় লাইট, ফ্যান, টিভি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
৪। পেশাদার ও মাল্টিটাস্কারঃ
টাইপ করতে করতে চোখে স্ক্রল বা অ্যাপ চেঞ্জ করা যাবে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে কী দেখা যায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের স্মার্টফোন গুলোতে “Touchless Interface” হবে নতুন নরমাল। শুধু চোখের ইশারা না, মুখভঙ্গি, মাথার নড়াচড়া দিয়েও ফোন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। মেটা, অ্যাপল, গুগল - সবাই এই নিয়ে কাজ করছে।
এমনকি এমন দিনও আসতে পারে, যেদিন আমরা শুধুমাত্র চিন্তা করে ফোন চালাতে পারব – যাকে বলা হচ্ছে- ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) "Brain-Computer Interface (BCI)"।
চোখ দিয়ে ফোন চালাতে চাইলে কী দরকার?
-
ফোনে থাকতে হবে উচ্চমানের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
-
Android 10 বা iOS 14 এর উপরে OS।
-
Eye Tracking অ্যাপ ইনস্টল থাকতে হবে।
-
হেড মুভমেন্ট বা gaze tracking পারমিশন অন করতে হবে।
-
গ্লেয়ার মুক্ত আলো (low light) থাকা ভালো।
কিভাবে চালু করবেন এই ফিচার? (উদাহরণ: Android ফোনে)
-
Settings > Accessibility এ যান
-
Switch Access বা Interaction Control খুঁজে বের করুন
-
Eye Control বা Facial Gesture ফিচার চালু করুন
-
স্ক্রিনে গাইড অনুযায়ী চোখের মুভমেন্ট কনফিগার করুন
-
এখন আপনি চোখ দিয়ে ফোন চালাতে পারবেন!
রাজশাহীর ‘অর্ডিনারি আইটি’র চোখে বাস্তব চিত্র।
ধরা যাক, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার কলেজ ছাত্র রিফাত। সে জন্ম থেকে হাত দিয়ে কিছু করতে পারে না। আগে সে শুধু পরিবারের সাহায্যে ফোন ব্যবহার করত। এখন সে EVA Facial Mouse দিয়ে চোখ দিয়ে ফোন চালিয়ে নিজেই ফেসবুক চালায়, ইউটিউব দেখে, এমনকি বন্ধুদের ম্যাসেজও পাঠায়!
এটাই প্রযুক্তির শক্তি। এটাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।
আরো পড়ুনঃস্মার্টফোনের ব্যাটারী কি কি কারনে নষ্ট হয় তা জেনে নিন।
উপসংহারঃ ফোন চালাতে হাত লাগবে না
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, চোখের ইশারায় স্মার্টফোন চালানো এখন আর কোনো Sci-Fi নয়। এটি বাস্তব প্রযুক্তি এবং প্রতিদিন আরও সহজ, সুলভ ও কার্যকর হয়ে উঠছে। যারা একে এখনো কল্পনা ভাবছেন, সময় এসেছে সেই ধারণা বদলে দেওয়ার। আপনি যদি প্রযুক্তি ভালোবাসেন, তবে এই দিকটি অবশ্যই একবার ঘেঁটে দেখার চেষ্টা করবেন।
যাইহোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
ভিজিট করুন- www.baneswarit.com
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url