যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয় – জেনে নিন সহজে পবিত্রতা অর্জনের উপায়।
যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয় – জেনে নিন সহজে পবিত্রতা অর্জনের উপায়।
আপনারা যারা "যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয় তা বিস্তারিত" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন,
আপনার গোনাহ মাফ পাওয়ার সহজ আমলগুলো সম্পর্কে? তাওবা, ইসতিগফার, দোয়া, সালাত ও সদকার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করা যায়। আরও জানতে পারবেন ইসলামীক দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ কোন আমলগুলো করলে গুনাহ মাফ হয়। এই লেখায় ধাপে ধাপে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে এসব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও আমলের ফজিলত সম্পর্কে।
১। তওবা ও ইস্তিগফারঃ
গোনাহ মাফের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো আন্তরিকভাবে তওবা করা। আল্লাহ বলেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ তওবা করো।” (সুরা আত-তাহরিম: ৮)
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে তওবা করে, আল্লাহ তার গোনাহ ক্ষমা করে দেন।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৩৭)
তওবার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছেঃ
১। পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া
২। ভবিষ্যতে সে পাপ না করার দৃঢ় সংকল্প করা
৩। পাপ কাজ পরিহার করা
২। নামাজ আদায় করাঃ
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে ছোট ছোট গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নদী থাকলে এবং সে ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচবার সেখানে গোসল করলে, তার দেহে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে?” সাহাবিরা বললেন, ‘না।’ তখন তিনি বললেন, ‘এটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করেন।’” (বুখারি, হাদিস: ৫২৮)
৩। কোরআন তিলাওয়াত করাঃ
কোরআন তিলাওয়াত করলে অন্তর পবিত্র হয় এবং গোনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং এর ওপর আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন একটি মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলো থেকেও উজ্জ্বল।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৫৩)
৪। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা (যিকর করা)
নিয়মিত ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবর’ ও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা গোনাহ মাফের অন্যতম উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি’ বলে, তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।” (বুখারি, হাদিস: ৬৪০৪)
৫। রোজা রাখাঃ
রোজা পাপ থেকে মুক্তির ঢাল স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি ঈমান ও আন্তরিকতার সঙ্গে রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি, হাদিস: ২০১৪)
৬। দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ
নিয়মিত দোয়া করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন। হাদিসে এসেছে-
“যে ব্যক্তি রাতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির’ ১০০ বার পড়বে, তার ১০০টি পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৬৯১)
৭। ভালো কাজ করাঃ
ভালো কাজ করলে তা পাপ মোচনের মাধ্যম হয়। কুরআনে বলা হয়েছে-
“নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দকর্মসমূহকে দূর করে দেয়।” (সুরা হুদ: ১১৪)
৮। হজ ও উমরাহ করাঃ
হজ ও উমরাহ করলে পূর্ববর্তী সব গোনাহ মাফ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ আদায় করে এবং কোনো অশ্লীল কথা ও গোনাহের কাজে লিপ্ত না হয়, সে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মতো পবিত্র হয়ে ফিরে আসে।” (বুখারি, হাদিস: ১৫২১)
৯। অন্যের গোনাহ ক্ষমা করাঃ
যে ব্যক্তি অন্যের ভুল ক্ষমা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। কুরআনে বলা হয়েছে-
“যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল-আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
১০। দান-সদকা করাঃ
দান করলে গোনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“দান-সদকা গুনাহকে এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুন নেভায়।” (তিরমিজি, হাদিস: ৬১৪)
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, আল্লাহর রহমতে বান্দার জন্য গোনাহ মাফের অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে শর্ত হলো, গোনাহ থেকে বিরত থাকা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আমল করা। আমরা যেন নিয়মিত তওবা করি, ইবাদতে মনোযোগী হই এবং গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য এসব আমল পালন করি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং হেদায়েত দিন। আমিন!
যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url