মাস্টার্স কি? মাস্টার্স শেষ করার পর কি পড়া যায় – সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ
মাস্টার্স কি? মাস্টার্স এর পর কি পড়া যায় - বিস্তারিত আলোচনা
শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো “মাস্টার্স” বা Masters Degree। শিক্ষাজীবনে “মাস্টার্স” শব্দটি আমরা সবাই কমবেশি শুনে থাকি। কিন্তু অনেকেই জানি না, মাস্টার্স ডিগ্রি আসলে কী, এটি কাদের জন্য, এবং মাস্টার্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী আর কী পড়তে পারেন বা কীভাবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এটি এমন একটি উচ্চশিক্ষা পর্যায় যেখানে একজন শিক্ষার্থী তার স্নাতক ডিগ্রির (Bachelor) পর নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আরও গভীর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। অনেকেই মাস্টার্সকে কেবল একটি সার্টিফিকেট হিসেবে দেখে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে মাস্টার্স হলো একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, গবেষণা ও পেশাগত দক্ষতা বিকাশের প্রধান স্তর।
মাস্টার্স ডিগ্রি আসলে কী
মাস্টার্স হলো এক ধরনের Postgraduate Degree, যা আপনি আপনার স্নাতক (Bachelor) সম্পন্ন করার পর করতে পারেন। অর্থাৎ, একজন শিক্ষার্থী BA, BSS, BSc, BBA, বা অন্য কোনো ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেন। এই প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা তাদের বিষয়ভিত্তিক আরও গভীর ও গবেষণাধর্মী জ্ঞান অর্জন করে। এটি মূলত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরতর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়। যেমন, কেউ যদি BSc in Physics করেন, তিনি Master of Science (MSc in Physics) করতে পারেন; কেউ যদি BBA করেন, তিনি MBA করতে পারেন; আবার কেউ BA in English করলে MA in English করতে পারেন। সহজভাবে বললে, মাস্টার্স হলো আপনার পছন্দের বিষয়ে একধাপ এগিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ।
আরো পড়ুনঃ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি গাইড - ২০২৫
অর্থাৎ, মাস্টার্স হচ্ছে আপনার পূর্ববর্তী বিষয়ের উপর আরও উন্নত পর্যায়ে পড়াশোনা করার সুযোগ। এটি সাধারণত ১ বা ২ বছর মেয়াদি হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে পরিবর্তিত হয়।
মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ ও ধরন
বাংলাদেশে মাস্টার্স প্রোগ্রাম সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে - এক বছর মেয়াদি এবং দুই বছর মেয়াদি। এটি নির্ভর করে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রোগ্রামে ভর্তি হচ্ছেন তার ওপর।
যেসব শিক্ষার্থী চার বছর মেয়াদি অনার্স করেছেন, তাদের জন্য এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রযোজ্য।
আর যারা তিন বছর মেয়াদি স্নাতক করেছেন (যেমন: Degree pass course), তাদের জন্য দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে।
এই প্রোগ্রামগুলো সাধারণত তত্ত্ব, প্র্যাকটিক্যাল, রিসার্চ ও থিসিস ভিত্তিক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে কোর্স কাঠামো ভিন্ন হতে পারে।
মাস্টার্সের ধরনঃ
- এক বছর মেয়াদি মাস্টার্সঃ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National University)-এর অনেক বিষয়ে এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স রয়েছে।
- দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্সঃ
পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক প্রোগ্রাম দুই বছর মেয়াদি।
- পেশাভিত্তিক মাস্টার্সঃ
যেমন MBA, LLM, M.Ed, MSS ইত্যাদি পেশাগত কোর্স।
মাস্টার্সের উদ্দেশ্য কী?
মাস্টার্স ডিগ্রির মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীকে তার বিষয়ের ওপর আরও গভীর ও গবেষণাভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করা। এছাড়াও এটি -
-
ভবিষ্যতে PhD বা গবেষণামূলক পড়াশোনা করার পথ তৈরি করে,
-
চাকরিতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেয়,
-
একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশে কোথায় মাস্টার্স করা যায়
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ যেমন -
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (DU)
-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (RU)
-
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (CU)
-
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (NU)
-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (JU)
-
ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ড্যাফোডিল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ইত্যাদি।
এছাড়াও বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি (BOU) থেকেও দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে মাস্টার্স করা যায়।
মাস্টার্স করার উপকারিতা
মাস্টার্স করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এটি শুধু চাকরির জন্য নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রেও সহায়ক।
-
আপনি যদি শিক্ষকতা বা গবেষণায় যেতে চান, মাস্টার্স হলো মূল ভিত্তি।
-
অনেক সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে মাস্টার্স ডিগ্রি বাধ্যতামূলক।
-
এটি আপনাকে একাডেমিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে এবং ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ বাড়ায়।
মাস্টার্স শেষে কি পড়া যায়
মাস্টার্স শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের সামনে একাধিক দিক উন্মুক্ত থাকে। যারা আরও উচ্চতর শিক্ষা বা গবেষণায় আগ্রহী, তারা নিচের প্রোগ্রামগুলো বিবেচনা করতে পারেন বা ভর্তি হতে পারেন।
🔹 ১। এমফিল (MPhil – Master of Philosophy)
এটি একটি গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রাম, যেখানে শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর গভীর গবেষণা করে থিসিস সম্পন্ন করেন। অনেকেই PhD করার আগে MPhil করেন।
MPhil সাধারণত ১.৫ থেকে ২ বছর মেয়াদি হয় এবং এটি PhD-র প্রস্তুতি হিসেবে ধরা হয়।
🔹 ২। পিএইচডি (PhD – Doctor of Philosophy)
PhD হলো সর্বোচ্চ শিক্ষাগত ডিগ্রি। PhD সম্পূর্ণভাবে গবেষণাভিত্তিক। PhD করতে হলে শিক্ষার্থীকে গবেষণায় পারদর্শী হতে হয় এবং নিজস্ব থিসিস জমা দিতে হয়।
PhD করার মাধ্যমে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক বা বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
🔹 ৩। পেশাভিত্তিক কোর্স (Professional Courses)
যারা ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চান, তারা মাস্টার্সের পর বিভিন্ন পেশাগত কোর্স করতে পারেন। এই কোর্সগুলো চাকরি বা ব্যবসা ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। যেমন-
-
MBA (Master of Business Administration)
-
LLM (Master of Laws)
-
M.Ed (Master of Education)
-
CA, CMA, CFA, PGD in HRM, PGD in IT ইত্যাদি।
🔹 ৪। বিদেশে উচ্চশিক্ষা (Study Abroad)
মাস্টার্স শেষে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা অনেকের স্বপ্ন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপসহ MPhil, PhD বা Professional Program-এ ভর্তি হওয়া যায়। যেমন -
-
Commonwealth Scholarship
-
Fulbright Program
-
Chevening Scholarship
-
Erasmus Mundus
Erasmus Mundus ইত্যাদি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে।
মাস্টার্স শেষে ক্যারিয়ারের সুযোগ
মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে চাকরিক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়া যায়।
সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংকিং, কর্পোরেট, NGO, এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
বিশেষ করে -
-
BCS ও অন্যান্য সরকারি চাকরি
-
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ শিক্ষকতা
-
ব্যাংক ও ফাইন্যান্স সেক্টর
-
রিসার্চ ইনস্টিটিউশন
-
কর্পোরেট ও আইটি সেক্টর
মাস্টার্স ডিগ্রি আপনাকে শুধু একটি চাকরির জন্য নয়, বরং জ্ঞানভিত্তিক ও পেশাগতভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
আরো পড়ুনঃ সরকারি চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল | বাংলাদেশে ক্যারিয়ার গাইড
মাস্টার্স শেষে নিজেকে আরও উন্নত করার কিছু টিপস
-
গবেষণাভিত্তিক লেখালেখি ও থিসিসে দক্ষতা অর্জন করুন
-
ইংরেজি ও কম্পিউটার স্কিল বাড়ান
-
বিদেশে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলে IELTS বা GRE প্রস্তুতি নিন
-
পেশাগত সংযোগ বাড়াতে LinkedIn ও ResearchGate প্রোফাইল তৈরি করুন
-
ক্যারিয়ার লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে পরবর্তী কোর্স বেছে নিন
ইন্টার্নশিপ বা প্রজেক্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
সারসংক্ষেপ (Conclusion)
সংক্ষেপে বলা যায়, মাস্টার্স ডিগ্রি একটি উচ্চতর শিক্ষার মূল স্তর, যা শিক্ষার্থীকে গবেষণা, জ্ঞান ও ক্যারিয়ারে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এরপর আপনি চাইলে MPhil, PhD অথবা Professional Course করতে পারেন, কিংবা চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশ করে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো - নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট রাখা এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করা। আপনার উদ্দেশ্য কি? একাডেমিক ক্যারিয়ার, চাকরি, নাকি গবেষণা? যে পথে এগোবেন, সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।
শিক্ষাজীবনের এই ধাপটি শুধু একটি সার্টিফিকেট নয়, বরং আপনার চিন্তা, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সোপান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url