রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার গুরুত্ব ও কারণ জেনে নিন।

ইসলামে রাতের ঘুমের আগে কিছু আমল বা দোয়া করার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র কুরআনের সুরা মুলক তিলাওয়াত করা। সুরা মুলক কুরআনের ৬৭তম সূরা, যা মক্কায় নাজিল হয়েছে এবং এতে ৩০টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাকে “আল-মানিয়াহ” বা “প্রতিরোধকারী” বলেও অভিহিত করা হয়, কারণ এটি কবরে শাস্তি থেকে রক্ষা করে।

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকাঃ

মানুষের প্রতিদিনের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হলো ঘুম। সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে চাই। কিন্তু জানেন কি? ইসলামে এমন একটি সূরা রয়েছে, যা ঘুমানোর আগে পাঠ করলে তা শুধু মনকে শান্ত করে না, বরং কিয়ামতের দিনও মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। সেই সূরাটি হলো সুরা মুলক (সূরা তাবারাকাল্লাজি)
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা মুলক তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।”
তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়া শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং এটি একজন মুমিনের জন্য নিরাপত্তা ও বরকতের প্রতীক।

সুরা মুলক পড়ার গুরুত্ব

সুরা মুলক ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা কুরআনের ৬৭তম অধ্যায়ে অবস্থিত। এই সূরার প্রতিটি আয়াতে রয়েছে গভীর শিক্ষা ও আল্লাহ তায়ালার শক্তি ও ক্ষমতার নিদর্শন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাদীসে এসেছে, “সুরা মুলক এমন একটি সূরা যা কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে।” তাই একজন মুমিন মুসলমানের জন্য এই সূরা নিয়মিত পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে এটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়, মন ও হৃদয়ে প্রশান্তি আসে এবং কিয়ামতের দিন এটি পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে। সুরা মুলক পাঠের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহর মহিমা ও সৃষ্টির নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করতে পারে, যা ঈমানকে দৃঢ় করে এবং জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

আরো পড়ুনঃ আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ সম্ভব! নাজিম সাহেবের গল্পে ৭টি বাস্তবিক উপায়

ঘুমানোর আগে সুরা মুলক

ঘুমানোর আগে সুরা মুলক তিলাওয়াত করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এই সূরা পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তা পড়তে উৎসাহিত করতেন। এই সূরায় আল্লাহ তায়ালার মহিমা, সৃষ্টি, ও মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর বার্তা রয়েছে। হাদীসে এসেছে, সুরা মুলক এমন একটি সূরা যা কিয়ামতের দিনে পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে অল্প সময় নিয়ে এই সূরাটি তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা লাভ করা যায়। এটি শুধু আখিরাতের মুক্তির উপায় নয়, বরং মানসিক প্রশান্তি ও শান্তিরও উৎস।

সুরা মুলক পড়ার বিশেষ কারণঃ

১। আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করাঃ সুরা মুলকে বারবার আল্লাহর সৃষ্টিজগত, তার ক্ষমতা, ও অনন্ত জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এটি পাঠকের মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভয় বৃদ্ধি করে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হয়।

২। কবরের জীবনের প্রস্তুতিঃ সুরা মুলক আমাদের মৃত্যুর পরের জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি পাঠ করলে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

৩। রাতে নিরাপত্তা ও সুরক্ষাঃ সুরা মুলক তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা হয়। এটি আমাদের মনকে শান্ত করে এবং গভীর ও নিরাপদ ঘুম নিশ্চিত করে।

রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয়

রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয় - এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই আসে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ঘুমানোর পূর্বে কিছু নির্দিষ্ট সূরা পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুরা মুলক (সূরা তাবারাকাল্লাজি)। হাদীসে এসেছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক তিলাওয়াত করতেন এবং সাহাবিদেরও তা পড়তে উৎসাহিত করেছেন। এই সূরাটি ৩০ আয়াত বিশিষ্ট এবং এটি কিয়ামতের দিনের শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সুরক্ষা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ার কথাও নবী করিম (সাঃ) নির্দেশ করেছেন, যা মানুষকে জিন-শয়তান, দুশ্চিন্তা ও অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই সূরাগুলো তিলাওয়াত করা একজন মুমিনের জীবনে শান্তি, বরকত ও নিরাপত্তা বয়ে আনে।

সুরা মুলক তিলাওয়াতের ফজিলত

সুরা মুলক হলো পবিত্র কুরআনের ৬৭ নম্বর সূরা, যার আয়াত সংখ্যা ৩০টি। এই সূরাটির ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সুরা মুলক হলো এমন একটি সূরা, যা পাঠকারীর জন্য কবরের আযাব থেকে রক্ষা প্রার্থনা করবে এবং আল্লাহর দরবারে তার পক্ষে সুপারিশ করবে।” (তিরমিজি, আহমাদ)।
সুরা মুলক তিলাওয়াত মানুষকে মৃত্যুর পরের জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আল্লাহর মহিমা সম্পর্কে গভীর চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কিভাবে আকাশ ও পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের প্রতিটি কাজে কেমন নিখুঁত হিসাব রাখছেন। তাই নিয়মিত সুরা মুলক পড়া শুধু আখিরাতের মুক্তির মাধ্যম নয়, বরং এটি একজন মুসলমানের অন্তরে আল্লাহভীতি ও ঈমানকে আরও দৃঢ় করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদিসে সুরা মুলকের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস হলোঃ

১। কবরের শাস্তি থেকে রক্ষাঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

"কুরআনে একটি সূরা আছে যা ৩০টি আয়াতবিশিষ্ট এবং এটি ব্যক্তি তার কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে।"

– (তিরমিজি, আবু দাউদ)

২। সুরা মুলক শাফায়াত করবেঃ এক হাদিসে বর্ণিত আছে-

“একটি সূরা আছে যা কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। সেটি হলো ‘তাবারকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক’।"

– (মুসনাদ আহমদ)

৩। ঘুমানোর আগে পড়ার নির্দেশনাঃ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেনঃ

"যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা মুলক তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।"

– (মুসনাদ আহমদ)

আরো পড়ুনঃ ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধির দোয়া - ধৈর্য ধারণ করার দোয়া আরবি 

রাতে সুরা মুলক পড়ার উপকারিতা

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক তিলাওয়াত করার রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এই সূরাটি এমন এক বিশেষ সূরা যা মানুষের জন্য কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার সুপারিশ করবে। হাদীসে এসেছে, “সুরা মুলক এমন একটি সূরা যা তার পাঠকের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে যতক্ষণ না সে ক্ষমা লাভ করে।” এটি প্রতিদিন রাতে পড়লে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তিকে কিয়ামতের ভয়াবহতা ও কবরের শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখবেন।

এছাড়াও রাতে সুরা মুলক পড়লে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, মন শান্ত হয় এবং ঘুম আরও গভীর ও আরামদায়ক হয়। দৈনন্দিন দুশ্চিন্তা, ভয় বা মানসিক অস্থিরতা দূর করতে এটি এক অনন্য আধ্যাত্মিক উপায়। নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নিকটত্ব অর্জন করে এবং জীবনে বরকত ও রহমত লাভ করে। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে সুরা মুলক পড়া আমাদের আখিরাত ও দুনিয়া-দুই জীবনেই উপকার বয়ে আনে। যেমন-

১। আধ্যাত্মিক শান্তিঃ রাতে সুরা মুলক পড়লে মনের মধ্যে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক শান্তি দেয়।

২। বিপদ থেকে রক্ষাঃ এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর রহমতের ছায়ায় রাখে।

৩। কবরের আযাব থেকে মুক্তিঃ সুরা মুলক পাঠের মূল ফজিলত হলো কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি। এটি কবরে একজন মুমিনের জন্য আলোর উৎস হবে।

সুরা মুলক পড়ার পদ্ধতি

সুরা মুলক পড়ার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং তা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অনুশীলনযোগ্য। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে অজু করে পরিপূর্ণ মনোযোগ ও শ্রদ্ধার সাথে এই সূরাটি তিলাওয়াত করতে হয়। কেউ চাইলে নামাজ শেষে কিংবা ঘুমানোর ঠিক আগে সুরা মুলক পড়তে পারেন। এটি সাধারণত কুরআনের ২৯তম পারার ৬৭ নম্বর সূরা, মোট ৩০টি আয়াত নিয়ে গঠিত।
তিলাওয়াতের সময় ধীরে ধীরে, অর্থ বুঝে পড়া উত্তম, কারণ এতে মন শান্ত থাকে এবং আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। যদি কেউ আরবি ভাষায় পড়তে না পারেন, তবে বাংলা উচ্চারণ বা অনুবাদ পড়লেও সওয়াব পাওয়া যায়। এছাড়া ঘুমের আগে ফোন বা কুরআন অ্যাপ থেকেও শুনে নেওয়া যেতে পারে, সেটিও তিলাওয়াতেরই অংশ হিসেবে গণ্য হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-এই সূরাটি পড়ার সময় নিয়ত করা উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। যেমন-

আরো পড়ুনঃ সূরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াতের তাৎপর্য।

১। ঘুমানোর আগে অযু করে পবিত্র অবস্থায় থাকুন।

২। নির্জন ও শান্ত পরিবেশে বসে তিলাওয়াত করুন।

৩। অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, যাতে এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারেন।

৪। নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

উপসংহারঃ

প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, সুরা মুলক পড়া একজন মুমিনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি শুধু কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করে না, বরং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে। সুরা মুলকের বার্তাগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা, এবং পরকালীন জীবনের প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সুরা মুলক তিলাওয়াত করা এবং এর বরকত ও রহমত লাভ করা।

[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন] 
কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানাবেন। 
আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের সাইটে  https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url