আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ সম্ভব! নাজিম সাহেবের গল্পে ৭টি বাস্তবিক উপায়

আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ সম্ভব! নাজিম সাহেবের গল্পে ৭টি বাস্তবিক উপায়

আপনারা যারা "আরবী না জেনেও কোরআনের সঙ্গ পাওয়ার ৭টি উপায়" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, আরবী জানেন না, তাই বলে কি কোরআনের কাছাকাছি যেতে পারবেন না? রাজশাহীর এক সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পে তুলে ধরা হলো এমন ৭টি উপায়, যা আপনাকেও কোরআনের আলোয় আলোকিত করবে। অনুপ্রেরণাদায়ক বাস্তব গল্প এবং ইসলামিক পরামর্শভিত্তিক এই লেখাটি মিস করবেন না।

চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই,  আরবী না জেনেও কোরআনের সঙ্গ পাওয়ার ৭টি উপায় !  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ সম্ভব!


ভূমিকাঃ আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ সম্ভব!

আমরা অনেকেই মনে করি কোরআনের সাথে সংযোগ মানেই আরবী জানা, আরবী বুঝতে পারা, কঠিন তাফসীর আয়ত্ত করা। অথচ বাস্তবতা হলো - আল্লাহর বাণী প্রতিটি হৃদয়ের জন্য, ভাষার জন্য নয়।

এই গল্পটা শুরু হয় নাজিম উদ্দিন সাহেব নামের একজন অতি সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে -
স্থানঃ রাজশাহীর পবা থানা।
পেশাঃ মুদির দোকানদার।
বয়সঃ ৪৭ বছর।
আরবী জানাঃ আরবী জানে না।
তবুও... এখন প্রতিদিন কোরআনের আলোয় দিন শুরু করেন।

কীভাবে এমন পরিবর্তন হলো ? চলুন জেনে নেই।

আরো পড়ুনঃ শিক্ষাদানে মহানবী (সা.) এর ১২ কৌশল ! আধুনিক শিক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। 


গল্পের শুরু ! এক মেয়ের সহজ কথা, এক বাবার জেগে ওঠা।

একদিন বিকেলে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরলেন নাজিম সাহেব। তাকে ক্লান্ত, বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। কারণ পাশের দোকানদার অনলাইন পেমেন্ট ব্যবসা চালু করায় তার বিক্রি কমে যাচ্ছে। হঠাৎ তার ১২ বছরের মেয়ে বলল উঠল,

“বাবা, আপনি কোরআন বোঝেন না, তাই বলে কি কোরআন আপনাকে বোঝে না?”

এই কথাটা যেন তার ঘুমন্ত হৃদয়কে নাড়িয়ে দিল। পরদিন থেকে তিনি এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন - আরবী না জানলেও কোরআনের সঙ্গ ছাড়বেন না।


উপায় ১। বাংলা অনুবাদে কোরআন পড়া - বোঝার চেষ্টা করুন আয়াতের পর আয়াত।

নাজিম সাহেব প্রথমে বাজার থেকে একটা বাংলা অনুবাদসহ কোরআন কিনলেন। প্রথম দিনেই তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন।

তার চোখে পানি এসে গেল যখন তিনি পড়লেন -

“তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও”

এই তো, এটাই তো তিনি খুঁজছিলেন - সোজা পথ

পরামর্শঃ

মাওলানা মুজিবুর রহমানের অনুবাদ সহজবোধ্য। প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে পড়া শুরু করুন। আয়াতের অর্থ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।


উপায় ২। কোরআন তিলাওয়াত শোনা - কোরআনের সুরে আত্মা প্রশান্ত হয়।

দোকানে বসেই তিনি প্রতিদিন ইউটিউবে বিভিন্ন সূরা শুনতে থাকেন। একদিন তিনি সূরা মারইয়াম শুনে কেঁদে ফেললেন।

তিনি বললেন,

“যতই বুঝি না কেন, কোরআনের সুরে এক অদ্ভুত শক্তি আছে।”

সেরা কারীদের নামঃ

  • আবদুর রহমান আস-সুদাইস

  • মিশার রাশিদ আল-আফাসি

  • আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ


উপায় ৩। ইউটিউব ও অ্যাপে বাংলা তাফসীর দেখা — গল্পে গল্পে কোরআন বোঝা।

তিনি খুঁজে পেলেন “Peace TV Bangla” ও “Islami Lecture” চ্যানেল। সেখানে কোরআনের আয়াত নিয়ে ছোট ছোট ব্যাখ্যা ও গল্প দেখে তিনি অভিভূত হন।

সেরা বাংলা তাফসীর চ্যানেলঃ

  • ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।
  • মুফতি কাজী ইব্রাহীম।
  • মাওলানা মেহেদী হাসান।

উপায় ৪। কোরআনের আয়াত থেকে ব্যক্তিগত শিক্ষা গ্রহণ করা।

একদিন পড়লেন সূরা বাকারাঃ

“আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”

এই আয়াত তার মনে এমন ভরসা দিল যে তিনি ব্যবসার খারাপ সময়েও ভেঙে পড়লেন না।

টিপসঃ

প্রতিদিন একটি আয়াত নিন এবং সেটি নিজের জীবনে কিভাবে প্রযোজ্য সেটা ভাবুন।

আরো পড়ুনঃ সূরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াতের তাৎপর্য।


উপায় ৫। নামাযে অর্থ জানার চেষ্টা করুন — ইবাদত হবে প্রাণবন্ত।

সূরা ফাতিহার বাংলা অর্থ মুখস্থ করে ফেললেন। এখন নামাযে আর আগের মত ফাঁকা ফাঁকা লাগে না। তিনি অনুভব করেন, ইমাম যা বলছেন, তিনি তার অর্থ জানেন।

টিপসঃ

সূরা কাওসার, সূরা ইখলাস, সূরা নাস – এই ছোট সূরাগুলোর অর্থ মুখস্থ করুন।


উপায় ৬। সহজ ইসলামিক বই পড়া — কোরআনের বাণী বাস্তবে রূপ দেয়।

তিনি “কুরআনের আলো”, “সোজা পথ” জাতীয় বই পড়া শুরু করলেন। এতে কোরআনের আদর্শ জীবনে বাস্তবভাবে কেমন তা বুঝতে পারলেন।

বই রিকমেন্ডেশনঃ

  • “কোরআনের আলো” - মাওলানা আতাউল্লাহ হুসাইনী।

  • “সহজ তাফসীর” - মোঃ মোফাখখারুল ইসলাম।

  • “কুরআনের গল্প” - শিশুদের জন্য হলেও বড়রাও উপকৃত হবেন।


উপায় ৭। হৃদয় দিয়ে দোয়া করুন — কোরআন যেন সঙ্গী হয় জীবনের।

নাজিম সাহেব প্রতিদিন ফজরের পর এক দোয়া করতেনঃ

“হে আল্লাহ, তুমি কোরআনকে আমার হৃদয়ের আলো বানাও, আমার দুঃখের সান্ত্বনা বানাও।”

এই দোয়া ধীরে ধীরে তার জীবনে প্রভাব ফেলতে লাগলো। এখন তার দোকানে “কোরআনের আয়াত” লেখা ছোট ছোট পোস্টার ঝুলানো থাকে।

উল্লেখযোগ্য দোয়াঃ

  • “اللهم اجعل القرآن ربيع قلبي” – হে আল্লাহ, কোরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত বানিয়ে দাও।


আরো পড়ুনঃ কোরআন বোঝা কি কঠিন? সহজভাবে কোরআন বোঝার উপায় ও গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

উপসংহার । কোরআনের দরজা সবার জন্য খোলা।

প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, কোরআনের মালিক আমাদের অন্তরের মালিক। ভাষা বাধা হতে পারে, কিন্তু নিয়ত যদি খাঁটি হয়, তাহলে আল্লাহ পথ খুলে দেন।

নাজিম সাহেব এখন আর কেবল দোকানদার নন — তিনি একজন কোরআনের আলোয় আলোকিত সাধারণ মানুষ।  আপনার কাছেও সুযোগ আছে। আজই শুরু করুন।

এক আয়াত দিয়ে। এক সুর দিয়ে। এক দোয়া দিয়ে।


এই লেখাটি কেমন লেগেছে, ভালো লেগেছে?

  •  শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে।
  •  নিচে কমেন্ট করে জানান আপনার মতামত।
  •  নিয়মিত ইসলামিক ও অনুপ্রেরণাদায়ক কনটেন্ট পেতে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগে।
  •   www.baneswarit.com

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url