ঋণ থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক আমল ! দোয়া, সূরা ও সহজ উপায়
ঋণ থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক আমল ! দোয়া, সূরা ও সহজ উপায়
আপনারা যারা "ঋণ থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক আমল ! দোয়া, সূরা ও সহজ উপায়" সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে ইসলামিক আমল, দোয়া ও কুরআনের বিশেষ সূরা সম্পর্কে। রাসূল (সা:) এর শেখানো দোয়া, নিয়মিত নামাজ ও সঠিক আমল কিভাবে আপনাকে ঋণমুক্ত করতে সহায়তা করবে তা বিস্তারিতভাবে পড়ুন এই আর্টিকেলে।
ভূমিকাঃ
ইসলামে ঋণ গ্রহণ এবং ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধে দেরি করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে না দেয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে অনেক সময় মানুষের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তারা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে পথ খুঁজে ফেরেন। এ পরিস্থিতিতে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এবং নির্ধারিত কিছু আমল অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে ঋণ থেকে মুক্তির জন্য কিছু বিশেষ আমল আলোচনা করব।
আরো পড়ুনঃ যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়–জেনে নিন সহজে পবিত্রতা অর্জনের উপায়।
১। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং ধৈর্যঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
"যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।"
(সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩)
ঋণ থেকে মুক্তির প্রথম শর্ত হলো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা এবং ধৈর্য ধরা। কঠিন সময়েও আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা রাখতে হবে এবং নৈতিকভাবে সঠিক পথে অটল থাকতে হবে।
২। রাসূল (সা.) এর শেখানো বিশেষ দোয়াঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঋণ থেকে মুক্তির জন্য একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণঃ
"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনা আল-হাম্মি ওয়াল-হাজানি, ওয়াল-আজযি ওয়াল-কাশালি, ওয়াল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দলা’ইদ-দাইনি ওয়া গা’লাবাতির-রিজাল।"
অর্থঃ
"হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই চিন্তা ও দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভয় থেকে, ঋণের ভার এবং মানুষের প্রাধান্য থেকে।" (বুখারি, মুসলিম)
প্রতিদিন এই দোয়া পাঠ করা ঋণ থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
৩। ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাঃ
ইস্তেগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) কেবল পাপ ক্ষমার মাধ্যম নয়, বরং এটি রিজিক বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ বলেনঃ
"তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করবেন।"
(সূরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)
যত বেশি সম্ভব ইস্তেগফার করুন এবং অন্তর দিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
৪। সূরা আল-ওয়াকিয়াহ তিলাওয়াতঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
"যে ব্যক্তি প্রতিদিন সূরা আল-ওয়াকিয়াহ তিলাওয়াত করবে, তাকে কখনো অভাবগ্রস্ত হতে হবে না।" (তিরমিজি)
এই সূরাটি নিয়মিত পড়লে রিজিকের পথে বরকত আসে এবং ঋণ পরিশোধ সহজ হয়।
৫। হালাল উপায়ে আয়ের চেষ্টাঃ
ঋণ পরিশোধে হালাল উপায়ে আয় করার চেষ্টা করতে হবে। ইসলামে হারাম উপায়ে রিজিক অন্বেষণ নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেনঃ
"একজন ব্যক্তি যদি সৎপথে উপার্জন করে এবং তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে, তবে আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হন।" (বুখারি)
৬। সদকা এবং দানঃ
দান বা সদকা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ, যা মানুষের দুনিয়াবি ও পরকালীন সমস্যার সমাধান করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"সদকা রিজিক বৃদ্ধি করে এবং বিপদ দূর করে।" (তিরমিজি)
আপনার সাধ্যমতো দান করুন, এটি ঋণ থেকে মুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
৭। ঋণদাতার সাথে সদাচরণঃ
ঋণদাতার সাথে সদাচরণ করুন এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সময় চেয়ে নিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
"যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে আন্তরিক চেষ্টা করে, আল্লাহ তার জন্য সহায়তা করেন।" (বুখারি)
৮। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পাঠ করুনঃ
রাসূল (সা.) বলেনঃ
"যে ব্যক্তি সকালে এই দোয়া পাঠ করবে, তার ঋণ আল্লাহ পরিশোধ করবেনঃ"
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণঃ
"আল্লাহুম্মা আকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আঘনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।"
অর্থঃ
"হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল দ্বারা পর্যাপ্ত করুন এবং হারাম থেকে বাঁচান, এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত করুন।" (তিরমিজি)
আরো পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রমাণিত আমল ! আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল।
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, ইবাদত করা এবং হালাল পথে চলার কোনো বিকল্প নেই। ধৈর্য ধরে আল্লাহর পথে চললে তিনি অবশ্যই উত্তরণের পথ তৈরি করবেন। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করে।
[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন]
কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানাবেন।
আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের সাইটে https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url