রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রমাণিত আমল ! আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল।(পর্ব ১)

রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রমাণিত আমল ! আয়-উপার্জনে বরকত আনুন (পর্ব ১)

প্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা কম বেশী সবাই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের আমল করে থাকি। কিন্তু কোন কোন আমলের কি কি ফজিলত সেই সম্পর্কে জানতেই আজকের এই আলোচনা। তাই চলুন জেনে নিই রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল সম্পর্কে।

রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রমাণিত আমল ! আয়-উপার্জনে বরকত আনুন
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল সম্পর্কে বিস্তারিত।

সূচীপত্রঃ রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল।

ভূমিকাঃ রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল।

রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল। আমরা অনেকেই অনেক রকমের আমল করে থাকি । এর মধ্যে রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল, এসব আমলও হইতো বা করে থাকি । কিন্তু আমরা জানিনা কোন কোন আমলের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি হয় এবং আয়-উপার্যনে বরকত আসে। তাই চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল সম্বন্ধে। আমলগুলো সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো।

আল্লাহর পথে দান করাঃ

দানের মাধ্যমে দানশীলতা বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা 'আলা ইরশাদ করেন,' তোমরা আল্লাহ্র জন্য যা কিছু ব্যয় করবে, আল্লাহ তা "আলা তোমাদেরকে তা পরিশোধ করবেন। সে সেরা ডিফেন্ডার '। (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা আসেন। একজন বললো, হে আল্লাহ!  দানকারীকে তার উপহারের জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার দিন।   অপর ব্যক্তি বললো, ইয়া আল্লাহ! মন্দকে ধ্বংস করুন। ' (বুখারি, হাদিস: ১,৪৪২, মুসলিম, হাদিস: ১,০১০)

আরো পড়ুনঃ পাপ থেকে ফিরে আসার পথ ! তওবা করার গুরুত্ব ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

শোকর আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ

যে ক্রিয়াকলাপ বা সময়কালে বিধান বাড়ানো হয় তার মধ্যে একটি হল আল্লাহ তা 'আলা যে আশীর্বাদ দিয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারণ কৃতজ্ঞতা জানানোর মাধ্যমে অনুগ্রহ বৃদ্ধি পায়।   কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তবে আমি তোমাদের প্রতিদান বাড়িয়ে দেব।   আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)

বিয়ে করাঃ

কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিতদের এবং তোমাদের দাসদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণদের বিয়ে দাও। যদি তারা নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন। কারণ আল্লাহ সর্বব্যাপী এবং সর্বশক্তিমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তা' আলা তিন শ্রেণীর মানুষকে সাহায্য করার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি বিয়ে করতে এবং পবিত্র জীবনযাপন করতে চান। (তিরমিজি, হাদীসঃ ১৬৫৫; ইবনে মাজাহ, হাদীসঃ ২৫১৮)

গরিব-অসহায়ের প্রতি সদয় হওয়াঃ

আপনি যখন দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের রাস্তায় হাত তুলতে দেখবেন, তখন প্রত্যেকেরই খারাপ আচরণ করা বন্ধ করা উচিত। আল্লাহ তা 'আলা বলেন,' তাদের সম্পদের উপর তাদের (ধনী-গরিবের) অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা দুর্বল তাদের জন্য তোমাদেরকে সাহায্য ও রিযিক দেওয়া হয়েছে। "(বুখারী, ২:৮৯৬)।" 

আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাঃ

আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা হল এমন একটি কাজ যা একজনের আয় বৃদ্ধি করে। কারণ আমরা এমন এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, যিনি সুখী হতে চান, যিনি অসুখী হতে চান না। কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের পালনকর্তা বলেন, আমাকে ডাক, আমি তোমাদেরকে উত্তর দেব। (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি প্রয়োজনের পরে মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করে, অর্থাৎ তার অভাব দূর করার জন্য মানুষের উপর নির্ভর করে, তার অভাব দূর হয় না। অন্যদিকে, যে ব্যক্তি অভাবের পরেও প্রতিকারের জন্য আল্লাহ্র উপর নির্ভর করে, আল্লাহ তাকে অবিলম্বে অথবা বিলম্ব না করে রিযিক দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৯৬ ও ২,৩২৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৪২১৯)

আরো পড়ুনঃ যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়–জেনে নিন সহজে পবিত্রতা অর্জনের উপায়।

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকাঃ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'সালাত শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাও এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং আল্লাহকে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। "১০) নবী (সা:) বললেন," "যদি তোমাদের মধ্যে কেউ সকালে দড়ি নিয়ে পাহাড়ে বের হয়।" তারপর সে কাঠ সংগ্রহ করে, বিক্রি করে, জীবিকা নির্বাহ করে এবং তা দান করে। এটা মানুষের চেয়ে তার জন্য ভালো। (বুখারি, হাদিস: ১,৪৮০; মুসলিম, হাদিস: ১,০৪২)

অনুশোচনা বা তওবা করাঃ

অনুতাপের দ্বারা দাসের রাগ বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।   তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।   তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের দেবেন উদ্যান ও নদী।  (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২; সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৮২)

ইবনে আব্বাস রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত। "যে ব্যক্তি অনবরত তওবা করে, আল্লাহ তা 'আলা সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করবেন, সমস্ত উদ্বেগ দূর করবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে খাদ্য সরবরাহ করবেন।   (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৫১৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: (৩,৮১৯0); মুস্তাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯১, হাদিস: (৭,৬৭৭)

সতর্ক থাকুন এবং আল্লার ওপর নির্ভর করুনঃ

যে ক্রিয়াকলাপ বা সময়কালে ঋষিকে উন্নীত করা হয় তার মধ্যে রয়েছে তাকওয়া, বিরত থাকা এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর আস্থা রাখা।   কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ্র অনুগ্রহ কামনা করবে, তিনি তার জন্য একটি উপায় বের করে আনবেন এবং তাকে এমন এক উৎস থেকে রিযিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।   (সূরা আল-সাদঃ ৩৫)

রাসুলুল্লাহ (সা:)   তিনি বলেন, 'যদি তোমরা আল্লাহ তা' আলার প্রতি ঈমান এনে থাক। তিনি যেমন পাখিদের রিযিক দেবেন, তেমনই তোমাদেরও রিযিক দেবেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা ছেড়ে যায় এবং সন্ধ্যায় পরিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস: ২,৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১৬৪)

অরো পড়ুনঃ কবর জিয়ারতের আসল নিয়ম ও দোয়া।

হজ ও উমরাহ পালন করাঃ

বারবার হজ ও উমরাহ পালন করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়।  আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তেমরা হজ্জ ও উমরা পালন কর।  কারণ এটা অভাব ও পাপ দূর করে, ঠিক যেমন একজন কামার লোহা, সোনা ও রূপা থেকে ময়লা দূর করে। ' (তিরমিজি, হাদিস: ৮১০; নাসায়ি, হাদিস: ২,৬৩১)

হিজরত ও জিহাদ করাঃ

রিজিক আল্লাহ তা 'আলার পথে হিজরত ও জিহাদে অংশ নিয়ে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়।  পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে হিজরত করবে, সে পৃথিবীতে অনেক আশ্রয় ও প্রাচুর্য পাবে।  (সুরা নিসা, আয়াত: ১০০)

ইবনে উমর (রা.)–র বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনি বলেন, আমার রিজিকটি আমার বর্শার ছায়ায় রাখা হয়েছে।   (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৬৬৭; বায়হাকি, হাদিস: ১,১৫৪)

নামায ও ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করাঃ

সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ঝুঁকি বাড়ায়। কাজ এবং ব্যবসার মাঝখানে নামায  আদায় করা উচিত, নামাযের মাঝখানে নয়। একই সময়ে, আপনাকে আল্লাহর উপাসনা করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,' আর তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং তাতে অটল থাকো। আমি তোমার কাছ থেকে কিছুই চাই না।  আমি তোমায় দিয়ে দিচ্ছি । আর মুমিনদের জন্য মঙ্গল। (সুরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ–তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার উপাসনার জন্য তোমার হৃদয় খালি কর। আমি তোমার হৃদয় পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। আর যদি তুমি তা না কর, তাহলে আমি তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার ভরণপোষণ করব না। ' (তিরমিজি, হাদিস–২,৪৬৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,১০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮,৬৯৬)

আরো পড়ুনঃ সফল হতে হলে যে অভ্যাসগুলো থাকা দরকার।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাঃ

সম্পর্ক গড়ে তোলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা।  আল্লাহ তা 'আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি এবং তাদের  প্রাপ্য প্রদান করি। (সূরা নিসা, আয়াত ৩৬; সূরা বনি ইসরায়েল, আয়াত ২৬)

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা:)-কে বলতে শুনেছি, 'যে ব্যক্তি তার জীবিকার মেয়াদ বাড়াতে চায় এবং তার আয়ু বাড়াতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৮৫; মুসলিম, হাদিস: ৪,৬৩৯)

আমাদের শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠকগণ রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং আয়-উপার্জনে বরকত আসার আমল সম্পর্কে আজকেরে আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যেই উক্ত আমলগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। তাই আসুন আমরা সবাই আমলগুলো মেনে চলি বা মেনে চলার চেষ্টা করি।

আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুরবেন না।

[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন]

কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানান।

আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন 

আমাদের সাইটে  https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ 

https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url