কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে? ইসলামী ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক

কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে? ইসলামী ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক

লিখেছেনঃ Baneswar IT Desk | ইসলামী শিক্ষা বিভাগ

আপনারা যারা "কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে? ইসলামী ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক" সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে যাবে? আল্লাহর বিচারের দিন এই ঘটনার পেছনের রহস্য, কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানুন। ইসলামী দৃষ্টিতে এর ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক আলোচনা করা হয়েছে।

কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে?
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, কিয়ামতের দিন মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে? ইসলামী ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা

কিয়ামতের দিন - এমন এক দিন, যেদিন আসমান-জমিন কাঁপবে, সূর্য মানুষের মাথার ওপরে চলে আসবে, প্রতিটি প্রাণী তাদের কর্মফল দেখতে পাবে। সেই দিনটি আল্লাহ তায়ালার ন্যায়বিচারের দিন। কিন্তু সেই দিন মানুষ এতটাই ভীত, হতবিহ্বল ও অসহায় থাকবে যে, তারা আল্লাহর কাছে বিচার শুরু করার অনুরোধ জানাতে নবীদের শরণাপন্ন হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো - মুমিনরা কেন নবীদের কাছে ফিরে আসবে?
নবীগণ কেন তাদের শাফাআতের অনুরোধ (সুপারিশ) প্রত্যাখ্যান করবেন?
এই বিষয়টি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ কোরআন বোঝা কি কঠিন? সহজভাবে কোরআন বোঝার উপায় ও গাইডলাইন জানুন

কিয়ামতের দিন বিচার শুরু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা

হাদীসে এসেছে - মানুষ যখন কিয়ামতের ময়দানে একত্রিত হবে, সূর্য খুব কাছে চলে আসবে, ঘামে ভিজে যাবে, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত, কেউ গলা পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। তখন সবাই বলবে,

“আজ যদি আমাদের বিচার শুরু হতো! আজ যদি কেউ আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতো!”

এভাবেই মানুষ নবীদের কাছে গিয়ে অনুরোধ জানাবে -
“হে আল্লাহর নবী, আপনি তো আল্লাহর প্রিয়! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য বিচার শুরু করার অনুরোধ করুন।”

১। হজরত আদম (আ.) – প্রথম প্রত্যাখ্যান

মানুষ প্রথমে হজরত আদম (আ.)-এর কাছে যাবে, কারণ তিনি মানবজাতির পিতা। তাঁকে তারা বলবে -
“আপনি তো আল্লাহর হাতে সৃষ্টি, আপনিই প্রথম নবী, আপনার জন্য ফেরেশতারা সিজদা করেছে; আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন।”

কিন্তু আদম (আ.) বলবেন -

“আজ আমি নিজেই ভীত। আমি জান্নাতে সেই গাছের ফল খেয়েছিলাম, যা থেকে আমাকে নিষেধ করা হয়েছিল। আমি সেই ভুলের কারণে জান্নাত থেকে নেমে এসেছি। আজ আমি সে মর্যাদায় নেই।”
তিনি বলবেন - “তোমরা হজরত নূহ (আ.)-এর কাছে যাও।”

শিক্ষণীয় দিকঃ

এটি আমাদের শেখায় - নবীগণও নিজেদের ভুলকে ছোট করে দেখতেন না। তারা আল্লাহর সামনে বিনয়ী ছিলেন এবং নিজেদের কর্ম নিয়ে চিন্তিত থাকতেন।

২। হজরত নূহ (আ.) – দ্বিতীয় প্রত্যাখ্যান

মানুষ এরপর হজরত নূহ (আ.)-এর কাছে যাবে। বলবে - “আপনি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রথম রাসূল, যিনি কুফরী ও শিরক থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিলেন। আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে বিচার শুরু করার অনুরোধ করুন।”

তখন নূহ (আ.) বলবেন -

“আমি আমার জাতির জন্য দোয়া করেছিলাম, আর আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেছিলেন। আজ আমি সে অবস্থায় নেই যে আল্লাহর সামনে মুখ তুলতে পারি।”
তিনি বলবেন - “তোমরা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে যাও।”

শিক্ষণীয় দিকঃ
একজন নবীও নিজের দোয়ার ফল নিয়ে চিন্তিত থাকেন - এটি আল্লাহভীতির পরিপূর্ণ প্রকাশ।

৩। হজরত ইব্রাহিম (আ.) – তৃতীয় প্রত্যাখ্যান

মানুষ তখন ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে যাবে। তাঁকে বলবে -
“আপনি তো আল্লাহর খলিল (প্রিয় বন্ধু), দয়া করে আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন।”

কিন্তু ইব্রাহিম (আ.) বলবেন -

“আমি জীবনে তিনটি কথা বলেছিলাম, যা আমার কাছে সত্য হলেও, আল্লাহর সামনে আমি সেগুলো নিয়ে লজ্জিত।”
তিনি বলবেন - “তোমরা হজরত মূসা (আ.)-এর কাছে যাও।”

শিক্ষণীয় দিকঃ
সত্যবাদী ইব্রাহিম (আ.) পর্যন্ত আল্লাহর সামনে নিজের অবস্থান নিয়ে ভীত। এটি দেখায়, আল্লাহর প্রতি বিনয়ই প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন।

৪। হজরত মূসা (আ.) – চতুর্থ প্রত্যাখ্যান

মানুষ এরপর মূসা (আ.)-এর কাছে যাবে। বলবে -
“আপনি তো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন (কালিমুল্লাহ)। আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করুন।”

মূসা (আ.) বলবেন -

“আমি এক মিসরীয়কে হত্যা করেছিলাম, যদিও তা ভুলবশত ছিল। আজ আমি সে মর্যাদায় নেই।”
তিনি বলবেন - “তোমরা হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও।”

শিক্ষণীয় দিকঃ

যদিও মূসা (আ.)-এর কাজ অনিচ্ছাকৃত ছিল, তবু তিনি আল্লাহর সামনে তা নিয়ে ভীত ছিলেন। এটি আল্লাহর প্রতি গভীর জবাবদিহিতার মনোভাব প্রকাশ করে।

৫। হজরত ঈসা (আ.) – পঞ্চম প্রত্যাখ্যান

মানুষ এরপর ঈসা (আ.)-এর কাছে যাবে। তাঁকে বলবে -
“আপনি তো আল্লাহর রূহ ও কালিমাহ্‌, কুমারী মরিয়মের পুত্র। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে বিচার শুরু করার অনুরোধ করুন।”

ঈসা (আ.) বলবেন -

“আজ আমি সে মর্যাদায় নেই। তবে তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাও। তিনি হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয়তম নবী।”

শিক্ষণীয় দিকঃ
ঈসা (আ.) জানতেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এরই এই মহান মর্যাদা আল্লাহ দান করবেন।

৬। মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) – শাফাআতের অনুমতি

অবশেষে সবাই হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে যাবে।
তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও বন্দনা করবেন, এমনভাবে যা আগে কেউ করেননি। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বলবেন -

“হে মুহাম্মাদ, মাথা উঠাও, যা চাও তা দান করা হবে, এবং সুপারিশ করো, তোমার শাফাআত গ্রহণ করা হবে।”

এরপর বিচার শুরু হবে, এবং মুমিনদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাফাআত আল্লাহ কবুল করবেন।

ইসলামী শিক্ষণীয় দিক

১। আল্লাহভীতি ও বিনয়ঃ নবীগণও নিজেদের কর্ম নিয়ে ভীত ছিলেন।

২। মানবজাতির অসহায়তাঃ কিয়ামতের দিনে কেউ নিজেকে বাঁচাতে পারবে না, শুধু আল্লাহর রহমতই একমাত্র আশ্রয়।

৩। মুহাম্মাদ  (সা.)-এর মর্যাদাঃ তিনি হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয়তম ও শাফাআতের যোগ্যতম ব্যক্তি।

৪। তাওবার শিক্ষাঃ আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রতিটি নবী তাওবা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষিত করেছেন।

উপসংহার

প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, কিয়ামতের দিন নবীদের কাছে ফিরে যাওয়ার এই ঘটনা আমাদের শেখায়-
মানুষের সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। নবীগণ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। তাই আমাদের উচিত পৃথিবীতে থেকেই তাওবা করা, সৎ কাজ করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।

কারণ, সেই দিন কেউ কারো কাজে আসবে না-

“সেদিন না সম্পদ, না সন্তান; কিছুই উপকারে আসবে না, শুধু সে-ই সফল হবে যে আল্লাহর কাছে পবিত্র হৃদয় নিয়ে উপস্থিত হবে।” (সূরা আশ-শু’আরা: ৮৮–৮৯)

[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন] 
কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানাবেন। 
আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের সাইটে  https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ

https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url