কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নামসমূহ ও তাদের অর্থ ! একটি বিশদ আলোচনা

কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নামসমূহ ও তাদের অর্থ ! একটি বিশদ আলোচনা

আপনারা যারা "কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নামসমূহ ও তাদের অর্থসম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন,  পবিত্র কোরআনে কিয়ামতকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন ইয়াওমুল কিয়ামাহ, ইয়াওমুদ্দীন, আস-সা’আহ ইত্যাদি। প্রতিটি নামের রয়েছে গভীর তাৎপর্য ও শিক্ষা। এই আর্টিকেলে কিয়ামতের এসব নাম ও তাদের বিশদ ব্যাখ্যা আলোচনা করা হয়েছে।

কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নামসমূহ ও তাদের অর্থ
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের নামসমূহ ও তাদের অর্থ ! একটি বিশদ আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকাঃ

ইসলাম ধর্মে কিয়ামত বা পৃথিবীর শেষ দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরআন মজিদে কিয়ামতের বিভিন্ন নাম এবং তার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামগুলো কিয়ামতের ভয়াবহতা, তার প্রকৃতি এবং মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা তুলে ধরে। এই প্রবন্ধে কোরআনে বর্ণিত কিয়ামতের কয়েকটি নাম এবং তাদের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হবে।

আরো পড়ুনঃ কোরআন বোঝা কি কঠিন? সহজভাবে কোরআন বোঝার উপায় ও গাইডলাইন জানুন

১। ইয়াওমুল-কিয়ামাহ (يَوْمُ الْقِيَامَةِ)

‘ইয়াওমুল-কিয়ামাহ’ অর্থ "পুনরুত্থানের দিন"। এটি সেই দিনকে বোঝায় যেদিন মানুষকে তাদের কবর থেকে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তাদের সমস্ত কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আসবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই।"

(সুরা আল-হজ, ২২:৭)

এই নামটি কিয়ামতের দিনের গুরুত্ব ও মানুষের জবাবদিহিতার প্রতি আলোকপাত করে।

২। ইয়াওমুদ-দীন (يَوْمُ الدِّينِ)

‘ইয়াওমুদ-দীন’ অর্থ "দানের বা প্রতিদানের দিন"। এটি সেই দিনকে নির্দেশ করে যেদিন প্রতিটি মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাদের পুরস্কৃত বা শাস্তি দেওয়া হবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"তুমি কি জান ইয়াওমুদ-দীন কী? সেই দিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না।"

(সুরা আল-ইনফিতার, ৮২:১৭-১৯)

এই নামের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সতর্ক করেছেন, যাতে তারা তাদের জীবনে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখে।

৩। ইয়াওমুল-হিসাব (يَوْمُ الْحِسَابِ)

‘ইয়াওমুল-হিসাব’ অর্থ "হিসাবের দিন"। এটি সেই দিন বোঝায় যখন প্রতিটি মানুষের কর্মের হিসাব নেওয়া হবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"সেই দিন তাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের কর্মফল সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে।"

(সুরা আল-হিজর, ১৫:৯২-৯৩)

এই নামটি মানুষের প্রতি জবাবদিহিতার চূড়ান্ত বার্তা বহন করে।

৪। আস-সা'আহ (السَّاعَةُ)

‘আস-সা'আহ’ অর্থ "ঘণ্টা" বা "মুহূর্ত"। এটি কিয়ামতের আকস্মিক আগমনের দিক নির্দেশ করে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"কিয়ামতের মুহূর্ত আসন্ন এবং আমি সেটিকে গোপন রেখেছি।"

(সুরা তা-হা, ২০:১৫)

এই নামটি কিয়ামতের অপ্রত্যাশিত আগমনের প্রতি ইঙ্গিত দেয়।

৫। ইয়াওমুল-ফাসল (يَوْمُ الْفَصْلِ)

‘ইয়াওমুল-ফাসল’ অর্থ "বিচারের দিন"। এটি সেই দিনকে বোঝায় যেদিন সত্য-মিথ্যা এবং ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা হবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"নিশ্চয়ই বিচারের দিন নির্ধারিত সময়।"

(সুরা আন-নাবা, ৭৮:১৭)

এই নামটি আল্লাহর সুবিচার প্রতিষ্ঠার বার্তা দেয়।

আরো পড়ুনঃ কুরাইশদের আল্লাহ নিরাপত্তা দিলেন কেন? সূরা কুরাইশের ব্যাখ্যা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

৬। ইয়াওমুল-জম’ (يَوْمُ الْجَمْعِ)

‘ইয়াওমুল-জম’ অর্থ "সমবেত হওয়ার দিন"। এই নামটি সেই দিনকে নির্দেশ করে যখন সমস্ত সৃষ্টিকে একত্রিত করা হবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"এটি সেই দিন যখন সবকিছু একত্রিত করা হবে, এটি এক প্রতিশ্রুত দিন।"

(সুরা আশ-শুরা, ৪২:৭)

এই নামটি আল্লাহর মহিমা এবং তার শক্তির উপর জোর দেয়।

৭। ইয়াওমুল-হাqqa (يَوْمُ الْحَقَّةِ)

‘ইয়াওমুল-হাqqa’ অর্থ "অপরিহার্য দিন" বা "সত্যের দিন"। এটি সেই দিনকে বোঝায়, যা নির্ধারিত এবং অবশ্যম্ভাবী।

কোরআনে উল্লেখঃ

"হাqqa কী, তুমি কি জানো হাqqa কী?"

(সুরা আল-হাqqa, ৬৯:১-৩)

এই নামটি কিয়ামতের সত্যতা ও এর অপরিহার্যতাকে তুলে ধরে।

৮। ইয়াওমুত-তাগাবুন (يَوْمُ التَّغَابُنِ)

‘ইয়াওমুত-তাগাবুন’ অর্থ "ক্ষতির দিন"। এটি সেই দিন বোঝায় যেদিন কাফিররা তাদের ক্ষতির অনুভব করবে।

কোরআনে উল্লেখঃ

"এটি সেই দিন, যেদিন ক্ষতি স্পষ্ট হবে।"

(সুরা আত-তাগাবুন, ৬৪:৯)

এই নামটি মানুষকে সতর্ক করে যে তারা যেন ভুল পথে না চলে।

আরো পড়ুনঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ ! ইতিহাস, সুন্নাহ ও করণীয়

উপসংহারঃ

প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, কোরআনে কিয়ামতের বিভিন্ন নাম এবং তাদের তাৎপর্য মানুষকে আল্লাহর নির্দেশাবলীর প্রতি সচেতন থাকার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। এই নামগুলো শুধু কিয়ামতের ভয়াবহতা নয়, বরং মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার গুরুত্বও তুলে ধরে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই দিন থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের সৎপথে চলার তৌফিক দিন। আমিন।

[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন]

কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানান।

আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে নিয়মিত চোখ রাখুন 
আমাদের সাইটে  https://www.baneswarit.com/ এবং আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url