চোখের সাধারণ সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান ! চোখ ভালো রাখতে ঘরে বসেই যা করবেন
চোখের সাধারণ সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান ! ডাক্তার ছাড়াই চোখ ভালো রাখার উপায়
ভূমিকাঃ চোখ ভালো রাখতে ঘরে বসেই যা যা করবেন
চোখ আমাদের দেহের দর্পণ। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে চোখের উপর চাপ অনেক বেশি। দিনের পর দিন মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তবে ভালো খবর হলো-চোখের এসব ছোটখাটো সমস্যার অনেক সমাধানই আছে আমাদের হাতের কাছেই, ঘরে বসে।
আরো পড়ুনঃ রাতকানা রোগ কেন হয়? লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার | বিশেষজ্ঞ মতামতসহ বিস্তারিত গাইড
চলুন জেনে নেওয়া যাক চোখের ৫টি সাধারণ সমস্যা এবং তার কার্যকর ঘরোয়া সমাধান।
চোখে শুষ্কতা (Dry Eye Syndrome)
লক্ষণঃ
-
চোখ জ্বালা করা
-
চোখে পানি পড়া
-
মনে হয় যেন চোখে ধুলো-বালি ঢুকেছে
ঘরোয়া সমাধানঃ
-
দিনে ২-৩ বার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে
-
ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা টি-ব্যাগ (গ্রিন টি বা ক্যামোমাইল) চোখের ওপর ৫-১০ মিনিট রাখতে হবে
-
চোখে ঘন ঘন পলক ফেলতে হবে
-
কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে
চোখে চুলকানি ও লালভাব
লক্ষণঃ
-
চোখ ঘনঘন চুলকানো
-
চোখ লাল হওয়া বা ফোলা
ঘরোয়া সমাধানঃ
-
এক কাপ ঠান্ডা গোলাপজল তুলায় ভিজিয়ে চোখে ৫-১০ মিনিট রাখুন
-
শসার পাতলা স্লাইস কেটে চোখে রাখলে আরাম পাবেন
-
অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখে আঙুল না লাগানো
চোখ ব্যথা ও ক্লান্তি
লক্ষণঃ
-
বেশি সময় পড়াশোনা বা মোবাইল স্ক্রিন দেখলে চোখে টান বা ব্যথা
-
মাথাব্যথার সঙ্গে চোখ ভারী লাগা
ঘরোয়া সমাধানঃ
-
প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড চোখ বিশ্রাম দিন (২০-২০-২০ নিয়ম)
-
চোখে বরফ মোড়ানো পাতলা কাপড় ৫ মিনিট রাখুন
-
রাতে ঘুম ঠিকমতো না হলে চোখে ব্যথা বাড়ে, তাই পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি
চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখা
চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দৃষ্টিশক্তির অবনতি বা চোখের কোনো অসুখের ইঙ্গিতও হতে পারে। এই সমস্যা দেখা দিতে পারে রেটিনার দুর্বলতা, শুষ্ক চোখ, চোখের পাওয়ার বেড়ে যাওয়া, অথবা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে। অনেক সময় অতিরিক্ত মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার, ঘুমের অভাব কিংবা পুষ্টির ঘাটতির কারণেও দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ চার বছরের নীচে শিশুদের জন্য কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ কেন তা বিস্তারিত জেনে নিন।
এই অবস্থায় গাজর, আম, ডিম, বাদাম ও দুধজাত খাবার বেশি করে খেলে চোখের পুষ্টি বাড়ে এবং রেটিনা শক্তিশালী হয়। চোখের ব্যায়াম যেমন ওপর-নিচ, ডানে-বামে তাকানো ও ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করলেও উপকার পাওয়া যায়। যদি ঝাপসা দেখার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দ্রুত চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত, কারণ এটি গ্লুকোমা, ছানি বা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো জটিল সমস্যার পূর্ব লক্ষণও হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণঃ
-
রেটিনার দুর্বলতা
-
শুষ্ক চোখ
-
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা চোখে পাওয়ার বেড়ে যাওয়া
ঘরোয়া সমাধানঃ
-
গাজর, আম, ডিম, বাদাম, দুধ – এসব খাদ্যে চোখের শক্তি বাড়ে
-
নিয়মিত চোখের ব্যায়াম (উপর-নিচ, ডানে-বামে তাকানো) করুন
-
দিনে অন্তত ১০ মিনিট খালি চোখে সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকুন
চোখে ফোলা বা ডার্ক সার্কেল
ঘরোয়া সমাধানঃ
-
ঠান্ডা শসা বা আলুর স্লাইস চোখে রাখুন
-
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন
-
হালকা ম্যাসাজ করুন বাদাম তেল বা নারকেল তেল দিয়ে
বিশেষ চোখের ব্যায়ামঃ
- ২০-২০-২০ নিয়মঃ প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন
- ব্লিঙ্কিং (পলক ফেলা)ঃ দ্রুত চোখের পলক ফেলুন ১৫-২০ বার
- সার্কুলার মুভমেন্টঃ চোখ ঘড়ির কাঁটার দিকে ও উল্টো দিকে ঘোরান ১০ বার
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
-
চোখে ইনফেকশন বা পুঁজ
-
আলো সহ্য না হওয়া
-
আকস্মিকভাবে ঝাপসা দেখা বা চোখে কিছু পড়ে যাওয়া
-
চোখে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে
আরো পড়ুনঃ আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন সহজ ভাষায়
উপসংহারঃ চোখের সাধারণ সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান
চোখের যত্ন নেওয়া শুরু হোক নিজের ঘর থেকেই। সাধারণ সমস্যা হলে এই ঘরোয়া সমাধানগুলো বেশ উপকারী হতে পারে। তবে যদি সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে বা বারবার ফিরে আসে, তখন অবশ্যই চোখের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চোখের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হলে আপনি শুধু ভালো দেখতে পারবেন না-ভবিষ্যতও দেখতে পাবেন আরও পরিষ্কারভাবে।
চোখ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি, আর এই চোখ প্রতিদিন নানা ধরণের চাপের মধ্যে পড়ে - মোবাইল, ল্যাপটপ, ধুলাবালি কিংবা ঘুমের অভাব। ফলে চোখে শুষ্কতা, চুলকানি, ঝাপসা দেখা বা ব্যথার মতো সাধারণ সমস্যাগুলো হরহামেশাই দেখা যায়। তবে এসব সমস্যা দেখা দিলেই আতঙ্কিত না হয়ে ঘরোয়া কিছু সহজ সমাধান মেনে চললে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়। যেমন - চোখ ধোয়া, গোলাপজল ব্যবহার, ঠান্ডা শসা বা টি ব্যাগ ব্যবহার, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, চোখের ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। তবে চোখে ইনফেকশন, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বা হঠাৎ ঝাপসা দেখার মতো গুরুতর সমস্যা হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
অর্থাৎ, চোখ ভালো রাখতে চাইলে দৈনন্দিন অভ্যাস ও খাবারের দিকে একটু নজর দিন-চোখ থাকবে সুস্থ, দৃষ্টি থাকবে পরিষ্কার।
আরো টপিক বা স্বাস্থ্যের ওপর আর্টিকেল পড়তে চাইলে জানাতে পারেন। এরকম আর্টিকেল পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url