আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন সহজ ভাষায়

আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন সহজ ভাষায়

আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন

ভূমিকাঃ

অনেক সময় হঠাৎ করেই পেটের সমস্যা শুরু হয়। পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব-এসবই হতে পারে আমাশয় রোগের লক্ষণ। এই রোগ সাধারণত দূষিত পানি বা খাবার থেকে হয়। আর চিকিৎসার পাশাপাশি খাবার নির্বাচন এখানে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

তাই আজ আমরা জানবো-

  • আমাশয় হলে কোন খাবারগুলো খাবেন
  •  কোন খাবারগুলো একদম এড়িয়ে চলবেন
  •  পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া টিপস

আমাশয় কীভাবে হয়?

আমাশয় এক ধরনের পেটের অসুখ, যার কারণে পাতলা পায়খানা হয়, অনেক সময় রক্ত বা মিউকাস (শ্লেষ্মা) মিশ্রিত থাকে। এটি সাধারণত অন্ত্রে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে হয়।

আমাশয় প্রধানত দুইভাবে হতে পারেঃ

১। জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাস) দ্বারা সংক্রমণ

এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। নিচের পরিস্থিতিগুলোতে এই সংক্রমণ হতে পারেঃ

  • দূষিত পানি পান করলে

  • অপরিষ্কার বা রাস্তার খাবার খেলে

  • মলমূত্রের মাধ্যমে ছড়ানো জীবাণু সংক্রমিত হাত মুখে গেলে

  • ব্যাকটেরিয়া যেমন Shigella, Salmonella, E. coli সংক্রমণ ঘটালে

এগুলোই ব্যাকটেরিয়াজনিত আমাশয় (Dysentery) তৈরি করে।

২। অমিবা নামক পরজীবী দ্বারা সংক্রমণ

এটি অমিবিক আমাশয় (Amoebic Dysentery) নামে পরিচিত।

এই পরজীবী মলমূত্রের মাধ্যমে ছড়ায় এবং কোলনে (বড় অন্ত্রে) গিয়ে ঘা তৈরি করে।
তখন দেখা যায়-

  • মল রক্ত ও শ্লেষ্মা মেশানো

  • তলপেটে ব্যথা

  • জ্বর

  • গ্যাস্ট্রিকের মতো চাপ অনুভব

এই অমিবা পরজীবীও আসে দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে।

    দুটোতেই পেট খারাপ হয়, তবে অমিবিক আমাশয়ে অনেক সময় রক্তও মেশানো পায়খানা হয়। এই অবস্থায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পানিশূন্যতা দেখা দেয়।

    তাই শুধু ওষুধ খেলেই হবে না-সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চলা খুবই জরুরি।


    আমাশয় হলে যেসব খাবার খেতে পারেন

    আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন

    আমাশয় হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, পেটের ভেতর ব্যথা হয়, কখনো বমি বা মাথা ঘোরাও হতে পারে। এই সময় সঠিক খাবার না খেলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই ডাক্তারের ওষুধের পাশাপাশি খেতে হবে এমন কিছু সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং পানিশূন্যতা রোধকারী খাবার, যেগুলো পেটের উপর চাপ ফেলে না। চলুন দেখে নিই—আমাশয় হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে।

    নিচে আমরা তালিকাভুক্ত করছি-কোন কোন খাবার আমাশয় হলে রোগীকে দেওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই খাবারগুলো খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।

    ১। সাদা ভাত (তেল-মসলা ছাড়া)

    সাদা ভাত সহজপাচ্য এবং এতে কোনো রকম ঝাল বা তেল থাকে না। এটা হালকা, সহজে হজম হয় এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
    টিপসঃ পাতলা ডাল বা মুগডাল দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ানো ভালো।

    ২। খোসা ছাড়া মুগ ডালের পাতলা ঝোল

    মুগডাল সহজপাচ্য, সবচেয়ে হালকা ডাল, সহজে হজম হয়, গ্যাস্ট্রিক কম করে। খুব বেশি ঘন না করে পাতলা ঝোলের মতো করে রান্না করুন। খোসা ছাড়া হলে গ্যাস্ট্রিক কম হয়।

    টিপসঃ রসুন বা পেঁয়াজ না দিলে ভালো।

    ৩। সিদ্ধ কচু/লাউ/পেপে

    এই সবজিগুলো পেট ঠান্ডা রাখে এবং ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় সহজে হজম হয়। কচু ও লাউ পায়খানা কিছুটা শক্ত করতেও সাহায্য করে।

    রান্নার টিপসঃ একদম সিদ্ধ করে, তেল-মসলা ছাড়া, শুধু লবণ দিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন।

    ৪। খেজুরের রস বা গুড়

    এটি শরীরে শক্তি দেয় এবং হালকা রস খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
    তবে ডায়াবেটিস থাকলে এড়িয়ে চলুন।

    ৫। টক দই (মিষ্টি দই নয়!)

    টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, যা পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। এটি পেট ঠান্ডা করে এবং হজমে সাহায্য করে।
    টিপসঃ খাওয়ার সময় দুপুরে বা রাতে এক বাটি দই। বাজারের মিষ্টি দই নয়, ঘরের টক দই খেতে হবে।

    ৬। ডাবের পানি

    আমাশয় হলে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। ডাবের পানি শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে এবং ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্সে সাহায্য করে।
    টিপস: দিনে ১-২ গ্লাসই যথেষ্ট। তবে এর বেশি না খাওয়ায় ভালো।

    ৭। লেবু পানি (লবণ ছাড়া)

    হালকা লেবুর পানি শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে সাহায্য করে। লেবুতে আছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
    লবণ বা চিনি না মিশিয়ে খাওয়ানো ভালো।

    ৮। সাদা খিচুড়ি (তেল ছাড়া)

    সাদা চাল, মুগ ডাল, সামান্য লবণ দিয়ে একদম হালকা খিচুড়ি তৈরি করুন। তেল-মসলা, পেঁয়াজ, রসুন কিছুই দিবেন না।

    • রোগী না খেতে চাইলে সামান্য লেবুর রস মেশানো যায়।


    ৯। সেদ্ধ আলু (খোসা ছাড়া)

    আলু কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর এবং পেট ভরায়।
    এটি পায়খানা শক্ত করতেও সাহায্য করে।

    • খাওয়ার নিয়মঃ শুধু সেদ্ধ করে সামান্য লবণ দিয়ে।


    ১০। সেদ্ধ আপেল বা কলা (কম পরিমাণে)

    এই ফলগুলো পেট ঠান্ডা করে এবং ফাইবার সরবরাহ করে।
    কাঁচা বা অপরিষ্কার ফল নয়-সেদ্ধ করে বা পরিষ্কার করে খেতে হবে।

    • বাচ্চাদের জন্যঃ এক চামচ করে দিনে ২ বার।


    আমাশয় হলে যেসব খাবার একদম খাওয়া উচিত নয়

    আমাশয় রোগীর খাদ্য তালিকা | কী খাবেন, কী খাবেন না – বিস্তারিত জানুন

    ঝাল বা তেলজাত খাবারঃ

    পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। এগুলো পেটে গ্যাস ও ব্যথা বাড়ায়।

    দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ

    দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজমে সমস্যা করে।

    কাঁচা ফল ও সালাদঃ

    এগুলো জীবাণুবাহিত হতে পারে। ভালোভাবে সিদ্ধ না করলে বিপদ বাড়ে।

    বাইরের খাবারঃ

    ফুচকা, চাটপটি, সিঙ্গারা-সবই নিষিদ্ধ। বাইরে থেকে খাবার নিলে পেটের সমস্যা আরও বাড়বে।

    চা ও কফিঃ

    ক্যাফেইন থাকায় এগুলো পেটের জন্য ক্ষতিকর।


    ঘরোয়া যত্ন ও টিপস

    •  দিনে প্রচুর পরিমাণে সেদ্ধ পানি পান করুন
    •  বিশ্রাম নিন, কিন্তু খালি পেটে থাকবেন না
    •  ডাক্তারের দেয়া ওষুধ সময়মতো খেতে হবে
    •  যদি রক্ত বা অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হয়, অবিলম্বে হাসপাতালে যান


    উদাহরণ হিসেবে ১ দিনের খাদ্যতালিকা

    সময়    খাবার
    সকাল ৮টা    সাদা ভাত + মুগ ডালের পাতলা ঝোল
    সকাল ১০টা    এক গ্লাস ডাবের পানি
    দুপুর ১টা    সেদ্ধ লাউ বা পেপে + একটু ভাত
    বিকেল ৫টা    এক গ্লাস লেবু পানি
    রাত ৮টা    সাদা খিচুড়ি (তেল ছাড়া) + দই

    উপসংহারঃ আমাশয় রোগীর খাবার অসাধারণ গুরুত্ব রাখে

    প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, আমাশয় রোগ খুব সাধারণ হলেও এর খাদ্য ব্যবস্থাপনা অসাধারণ গুরুত্ব রাখে। এক চামচ ভুল খাবার পুরো চিকিৎসার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি যদি নিজের বা পরিবারের কারো জন্য খাবারের তালিকা বানাতে পারেন, সেটাই হবে আমাদের পরিশ্রমের সফলতা। আর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকার হয়ে থাকে, সাদাসিধা জীবনধারায় অন্যকেও শেয়ার করে উপকার করুন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url