শাবান মাসের গুরুত্ব ও আমল | প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয় মাসে আপনি কী করবেন?
শাবান মাসের গুরুত্ব ও আমল | প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয় মাসে আপনি কী করবেন?
আপনারা যারা "শাবান মাসের গুরুত্ব ও আমল | প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয় মাসে আপনি কী করবেন?" এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, শাবান মাস কেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট প্রিয় একটি মাস। এই মাসের বিশেষ কি কি আমল ও ফজিলত রয়েছে। কেন শাবান মাস এত গুরুত্বপূর্ণ? কী আমল করা উচিত? বিস্তারিত জানুন এই নিবন্ধে।
চলুন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নেই, "শাবান মাসের গুরুত্ব ও আমল | প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয় মাসে আপনি কী করবেন?" সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
শাবান মাস হলো ইসলামিক বর্ষপঞ্জির অষ্টম মাস, যা রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এই মাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং বিশেষ ইবাদত করতেন। শাবান মাসে তাঁর জীবনযাপন, রোজা পালন ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আমরা এর থেকে শিক্ষা নিতে পারব এবং আমাদের ইবাদত আরও উন্নত করতে পারব। শাবান মাস এমন একটি মাস, যেখানে আমলগুলো আল্লাহর কাছে উঠানো হয়, আর এই মাসের মধ্যেই আসে পবিত্র লাইলাতুল বরাত - যাকে আমরা 'শবেবরাত' নামে জানি।
আরো পড়ুনঃ মহানবী (সা.)–কে কতটা মানতে হবে ! ইসলামের নির্দেশনা ও মুসলমানের দায়িত্ব সম্পর্কে জেনে নিন।
চলুন ভেঙে ভেঙে জেনে নিই শাবান মাসের গুরুত্ব, ফজিলত, ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত।
শাবান মাস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
রাসুল (সা.)-এর প্রিয় মাস ! শাবান মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এটি রমজানের আগের মাস এবং এতে এমন এক মহিমান্বিত রাত রয়েছে, যা লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত) নামে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
"এটি এমন একটি মাস, যা রজব ও রমজানের মধ্যে অবস্থিত। মানুষ এ মাস সম্পর্কে গাফিল থাকে। অথচ এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে উঠানো হয়। তাই আমি চাই, যখন আমার আমল পেশ করা হবে, তখন আমি রোজা রাখি।" (নাসাঈ: ২৩৫৭, আহমদ: ২৭৫২০)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবী (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন এবং ইবাদতে মনোযোগী হতেন।
প্রিয়নবী (সা.)-এর শাবান মাসের রোজাঃ
হাদিসের বর্ণনামতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেনঃ
"আমি রাসূল (সা.)-কে কখনো এক মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যতটা তাঁকে শাবান মাসে রাখতে দেখেছি। তিনি প্রায় পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন।"
(বুখারি: ১৯৭০, মুসলিম: ১১৫৬)
তবে নবী (সা.) পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন না, বরং অধিকাংশ সময় রোজা রাখতেন, যাতে তাঁর ওপর কোনো কষ্ট না আসে এবং রমজানের জন্য প্রস্তুত থাকা যায়।
শবে বরাত ও নবী (সা.)-এর ইবাদতঃ
শবে বরাত অর্থ হলো মুক্তির রাত। এটি শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত ‘লাইলাতুল বরাত’, যা ইসলামে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে বিবেচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
"শাবান মাসের পনেরোতম রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা দেন - ‘কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। কে আছো, যে রিজিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো, যে দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য দোয়া করবে? আমি তার দুঃখ-কষ্ট দূর করব।" (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)
এই রাতে নবী (সা.) বিশেষ দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন এবং উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
শাবান মাসে রাসূল (সা.)-এর অন্যান্য আমলঃ
১। বেশি বেশি রোজা রাখাঃ নবী (সা.) শাবান মাসে অধিক নফল রোজা রাখতেন। আপনি চাইলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আয়ামে বীজ (নফল) রোজা রাখতে পারেন।
২। রাতের ইবাদতঃ তিনি এই মাসে বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। বিশেষত শবেবরাতের রাতে আপনি নির্জনে দোয়া করতে পারেন। রাসুল (সা.) বলতেন, “এই রাতে আল্লাহ বলেনঃ- ”আছো কি কেউ ক্ষমা প্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব।”
৩। দোয়া ও ইস্তেগফারঃ তিনি উম্মতের জন্য ক্ষমা চাইতেন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্যস্ত থাকতেন। তাই এই মাসে বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা চাওয়া উচিত। এটি এক প্রাক-রমজান প্রস্তুতি হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
৪। কুরআন তিলাওয়াত করাঃ শাবান মাসে কুরআন তিলাওয়াত বাড়ানো একটি উত্তম আমল। এটি রমজানের জন্য আত্মিক প্রস্তুতিও বটে।
৫। রমজানের প্রস্তুতিঃ শাবান মাসকে তিনি রমজানের পূর্বপ্রস্তুতির মাস হিসেবে নিতেন, যাতে রমজানে অধিক ইবাদতে মনোনিবেশ করা যায়।
৬। গরিব-অসহায়দের সাহায্য করাঃ শাবান মাসে সাদকা বা দান করার ফজিলত অনেক। রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে গরিবদের পাশে দাঁড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ নবীজি (সা.)-এর অন্তিম সময় ! একটি হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
আমাদের করণীয়ঃ
১। নফল রোজা রাখা - বিশেষ করে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা রাখা উত্তম।
২। নামাজ ও দোয়া বৃদ্ধি করা - বিশেষ করে তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ আদায় করা।
৩। কুরআন তিলাওয়াত করা - কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা।
৪। ইস্তেগফার ও দোয়া করা - নিজের ও উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৫। দান-সদকা করা - দুঃস্থ ও গরিবদের সাহায্য করা।
যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেনঃ
১। বিদআত বা নতুন ধর্মীয় আচরণ করা - কুরআন ও সহিহ হাদিসে যা নেই, তা থেকে বিরত থাকুন।
২। রাত্রি উপবাসের বিশেষ নিয়ত করে নিজস্ব আমল তৈরি করা - যা রাসুল (সা.) করেননি।উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, শাবান মাস শুধু একটি সাধারণ মাস নয়। এটি রমজানের প্রস্তুতির মাস, এটি গুনাহ মাফের মাস। এটি প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয় মাস - তাই আমাদের উচিত এই মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। আপনি যদি এখন থেকেই ইবাদতের অভ্যাস গড়েন, তাহলে রমজান মাস আপনার জন্য আরো বরকতময় হবে।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষাদানে মহানবী (সা.) এর ১২ কৌশল ! আধুনিক শিক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
আসুন, শাবান মাসের এই বরকতময় সময়কে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের আমলনামাকে সুন্দর করি। শাবান মাসের শিক্ষা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল থেকে আমরা বুঝতে পারি, এটি ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমাদেরও উচিত এ মাসে বেশি বেশি আমল করে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। নবী (সা.)-এর মতো রোজা রাখা, দোয়া করা ও ইবাদত বাড়ানো আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মাসের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url