ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি গাইড ২০২৫ – বিভাগ, ভর্তি প্রক্রিয়া ও চাকরির সুযোগ
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি গাইড - ২০২৫
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি নির্বাচন বিষয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করার পর ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যে সেরা কারিগরী কোর্স । তাই এই কারিগরী কোর্সে ভর্তি বিষয়ে এবং কোর্স নির্বাচন করার বিষয়ে আমাদের জানা উচিত।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি গাইডলাইন - ২০২৫ সম্পর্কে।ভূমিকাঃ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ! আধুনিক যুগের বাস্তব শিক্ষার দিক
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করার পর সরাসরি উচ্চমাধ্যমিক না পড়ে টেকনিক্যাল বা কারিগরি শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি কোর্স হচ্ছে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স । এই কোর্সটি ৪ বছর মেয়াদি এবং এতে বাস্তবজ্ঞান, প্রযুক্তি ও হাতে-কলমে শেখার সুযোগ থাকে। তাই একবার যদি এই কোর্সে ভর্তি হয়ে যান তাহলে নিয়ম মেনেই আপনাকে এই কোর্সের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তাই ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির আগে কোর্স নির্বাচন করার নিয়ম জানতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ! ভর্তি, ক্যাম্পাস জীবন, বিভাগ, সুযোগ সুবিধা ও বিস্তারিত গাইডলাইন।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো -
-
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কী,
-
কোথায় ভর্তি হবেন,
-
কীভাবে ভর্তি হতে হয়,
-
কোন কোন বিভাগে পড়া যায়,
-
খরচ কত,
-
চাকরির সুযোগ কেমন-সবকিছু বিস্তারিতভাবে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স হল একটি ৪ বছর মেয়াদি কারিগরি কোর্স, যা বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড (BTEB) অনুমোদিত। এটি মূলত এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি, যেখানে তারা যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি, ইলেকট্রিক্যাল, কম্পিউটার, সিভিল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে কাজ শেখে। যা পরবর্তীতে চাকরি অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য কাজে লাগে।
কোথায় পড়া যায়?
বাংলাদেশে প্রায় ৫০টির বেশি সরকারি ও কয়েকশো বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এছাড়া সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ও সামরিকভিত্তিক মিলিটারি ইন্সটিটিউট MILIT (Military Institute) রয়েছে। যেখানে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। নিচে কিছু সরকারি ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এর নাম উল্লেখ করা হলোঃ
সরকারি প্রতিষ্ঠানঃ
-
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
-
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
-
খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া পলিটেকনিক
-
ময়মনসিংহ মহিলা পলিটেকনিক
-
সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানঃ
-
Daffodil Polytechnic Institute
-
Safiuddin Sarker Academy & Polytechnic
-
IST, IUBAT, Sonargaon Institute ইত্যাদি
কোন কোন বিভাগে পড়া যায়?
জনপ্রিয় বিভাগসমূহঃ
১। কম্পিউটার টেকনোলজিভবিষ্যতের প্রযুক্তির মূল চাবিকাঠি
-
কি শেখানো হয়ঃ প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্কিং
-
ক্যারিয়ারঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ওয়েব ডেভেলপার, আইটি এক্সপার্ট, ফ্রিল্যান্সার
-
বিশেষ তথ্যঃ BPO ও Freelancing সেক্টরে দ্রুত চাকরি পাওয়া যায়
বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার প্রফেশনাল ফিল্ড
-
কি শেখানো হয়ঃ মোটর, ট্রান্সফরমার, লাইটিং সিস্টেম, পাওয়ার প্ল্যান্ট
-
ক্যারিয়ারঃ ইলেকট্রিশিয়ান, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি/পিডিবি-তে চাকরি
-
বিশেষ তথ্যঃ দেশে ও বিদেশে ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ানদের প্রচুর চাহিদা
অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভিত্তি
-
কি শেখানো হয়ঃ বিল্ডিং ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, ম্যাপিং, সিভিল ড্রইং
-
ক্যারিয়ারঃ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সাইট সুপারভাইজার, PWD/ LGED এ চাকরি
-
বিশেষ তথ্যঃ সরকারি প্রকল্পে Sub-Assistant Engineer পদে চাহিদা বেশি
যন্ত্রপাতি ও মেশিন নির্ভর শিল্পের মূল চালিকা শক্তি
-
কি শেখানো হয়ঃ মেশিন ডিজাইন, প্রোডাকশন, অটোমোবাইল, ওয়ার্কশপ
-
ক্যারিয়ারঃ ফ্যাক্টরি টেকনিশিয়ান, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্কশপ সুপারভাইজার
-
বিশেষ তথ্যঃ ভারী শিল্প ও গার্মেন্টসে সরাসরি চাকরি পাওয়া যায়
মাইক্রো প্রযুক্তির যুগে চাহিদাসম্পন্ন
-
কি শেখানো হয়ঃ সার্কিট ডিজাইন, রেডিও-টিভি, মোবাইল, মাইক্রোকন্ট্রোলার
-
ক্যারিয়ারঃ সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে চাকরি
-
বিশেষ তথ্যঃ মোবাইল ও টেলিকম খাতে চাকরি পাওয়ার ভালো সম্ভাবনা
বাংলাদেশের রপ্তানি নির্ভর শিল্প খাত
-
কি শেখানো হয়: ফ্যাব্রিক, ডাইং, নিটিং, গার্মেন্টস প্রোডাকশন
-
ক্যারিয়ার: গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার
-
বিশেষ তথ্য: প্রতিটি গার্মেন্টসে টেক্সটাইল টেকনোলজি হোল্ডারদের দরকার
সৃজনশীলতা ও ডিজাইনের যুগ
-
কি শেখানো হয়: 2D/3D ড্রইং, ডিজিটাল প্ল্যানিং, অটোক্যাড
-
ক্যারিয়ার: ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট সহকারী, ফ্রিল্যান্স প্ল্যানার
-
বিশেষ তথ্য: Freelancing মার্কেটে AutoCAD-ভিত্তিক কাজের চাহিদা বেশি
খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রক্রিয়াকরণে আগ্রহীদের জন্য
-
কি শেখানো হয়: ফুড প্রসেসিং, হাইজিন, কনজারভেশন, প্যাকেজিং
-
ক্যারিয়ার: ফুড ইন্ডাস্ট্রির ল্যাব টেক, ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর
-
বিশেষ তথ্য: সরকারি খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরির সুযোগ থাকে
বিশেষায়িত সেক্টরে দক্ষতা গঠনের সুযোগ
-
কি শেখানো হয়: পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেশন, রেফ্রিজারেশন সিস্টেম, মাইনিং টেকনিকস
-
ক্যারিয়ার: পাওয়ার সেক্টর, কোল মাইন, HVAC কোম্পানি
-
বিশেষ তথ্য: HVAC (AC/Fridge) সার্ভিসিংয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা
১০। কেমিক্যাল টেকনোলজি
শিল্প ও গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ শাখা
-
কি শেখানো হয়: কেমিক্যাল প্রসেস, ল্যাব অ্যানালাইসিস, কসমেটিকস, পেইন্ট
-
ক্যারিয়ার: কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, রাবার, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে টেকনিশিয়ান
-
বিশেষ তথ্য: বিদেশে এই বিষয়ের দক্ষদের জন্য চাকরির সম্ভাবনা ভালো
কোন টেকনোলজি আপনার জন্য সেরা?
আগ্রহের ক্ষেত্র পরামর্শযোগ্য টেকনোলজি
কম্পিউটার, কোডিং, আইটি কম্পিউটার টেকনোলজি
ডিজাইন, প্ল্যানিং আর্কিটেকচার ডিজাইন
মেশিন, গাড়ি, কারখানা মেকানিক্যাল
বিল্ডিং, নির্মাণ সিভিল
মোবাইল, সার্কিট ইলেকট্রনিক্স
কারেন্ট, বৈদ্যুতিক কাজ ইলেকট্রিক্যাল
ফ্যাশন, গার্মেন্টস টেক্সটাইল
ফুড/কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি ফুড/কেমিক্যাল টেকনোলজি
বিশেষজ্ঞ টিপসঃ
- ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চাইলে কম্পিউটার, আর্কিটেকচার বা ইলেকট্রনিক্স বেছে নিন।
- সরকারি চাকরির লক্ষ্য থাকলে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল ভালো অপশন।
- গার্মেন্টস বা ইন্ডাস্ট্রিতে দ্রুত চাকরি চাইলে টেক্সটাইল বা ফুড টেকনোলজি উপযুক্ত।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি প্রক্রিয়া
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
-
এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় গড় GPA ৩.৫০ (তথ্যপ্রযুক্তি বা গণিত বিষয়ে অবশ্যই C থাকতে হবে)।
আবেদন পদ্ধতিঃ
১। ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয় (http://btebadmission.gov.bd)
২। একটি ইনস্টিটিউটে নয়, সর্বোচ্চ ১৫টি পছন্দক্রম দেওয়া যায়।
৩। আবেদন ফিঃ প্রায় ১৬০ টাকা (SMS এর মাধ্যমে)
ভর্তি সময়ঃ
-
সাধারণত মে-জুন মাসে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়।
-
ভর্তি তালিকা দুই বা তিনটি ধাপে প্রকাশ করা হয়।
খরচ কত?
সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেঃ
-
ভর্তি ফি: ১,০০০–২,০০০ টাকা (প্রথমবার)
-
প্রতি সেমিস্টারে খরচ: ৫০০–৮০০ টাকা
-
পুরো ৪ বছরে মোট খরচঃ প্রায় ৭,০০০–১০,০০০ টাকা
বেসরকারি পলিটেকনিকেঃ
-
ভর্তি ফি: ৫,০০০–২০,০০০ টাকা
-
মাসিক টিউশন ফি: ২,০০০–৫,০০০ টাকা
-
পুরো কোর্সে খরচ: প্রায় ১–২ লক্ষ টাকা
ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও চাকরি
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর আপনি নিচের ক্যারিয়ারগুলিতে প্রবেশ করতে পারেন-
সরকারি চাকরিঃ
-
PDB, WZPDCL, Titas Gas, LGED, WASA ইত্যাদি
-
পদঃ Sub Assistant Engineer, Junior Instructor
প্রাইভেট চাকরিঃ
-
Construction, IT Firm, Garments Factory, Power Plant
-
পদঃ Technician, Maintenance Engineer, CAD Operator
বিদেশে কাজের সুযোগঃ
-
মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে টেকনিক্যাল স্কিলভিত্তিক চাকরি
-
ডিপ্লোমা সনদধারীদের চাহিদা বেশি
উচ্চশিক্ষার সুযোগঃ
-
BSc in Engineering (Laterally 2nd year এ ভর্তি)
-
Open University বা Evening Courses
কেন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং করবেন?
১। বাস্তব ভিত্তিক কাজ শেখার সুযোগ২। SSC’র পরই ভালো ক্যারিয়ার গড়ার পথ
৩। খরচ কম
৪। চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি
৫। দেশ ও বিদেশে চাহিদাসম্পন্ন
সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তরঃ
কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে Evening Course আছে।
শেষ কথাঃ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং - ২০২৫
আজকের আধুনিক যুগে শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন। হাতে-কলমে কাজ জানা থাকলে, সেই জ্ঞান আপনাকে এগিয়ে রাখবে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এমনই একটি মাধ্যম, যেখানে আপনি শিক্ষা ও কাজ - দুটোই একসঙ্গে শিখতে পারেন। সঠিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে আপনি গড়ে তুলতে পারেন এক সফল টেকনিক্যাল ক্যারিয়ার।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করার নিয়ম ২০২৫
এসএসসি পাস করার পর একাডেমিক লাইনে না গিয়ে হাতে-কলমে কাজ শেখার পথ খুঁজছেন? তাহলে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। সরকারি বা বেসরকারি যে কোন ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, আপনি হতে পারেন আগামী দিনের একজন দক্ষ টেকনিক্যাল এক্সপার্ট। তাই সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নিন, আর তৈরি করুন এক সফল ভবিষ্যৎ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url