জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি আমল – দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সোনালী সুযোগ
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি আমল – দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সোনালী সুযোগ
আপনারা যারা "জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি আমল" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল সম্পর্কে। কিভাবে এই মহামূল্যবান দিনগুলোতে ইবাদত করে আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারেন - তা বিস্তারিত পড়ুন এই আর্টিকেলে।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ১০টি আমল সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন – ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা ফজিলতপূর্ণ?
আমরা সবাই জানি, ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের একটি হলো জিলহজ্ব মাস। এই মাসে হজ্ব, কুরবানি আর ঈদুল আজহার মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো পালন করা হয়।
কিন্তু আপনি কি জানেন?
জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন সম্পর্কে হাদীসে এসেছে এমন একটি কথা, যা শুনলে আপনি অবাক হবেন!
হাদিস থেকে জানা যায়ঃ
"আল্লাহর কাছে কোনো দিন এত বেশি পছন্দনীয় না, যেদিন বান্দারা নেক আমল করে - যতটা জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে করে।"
(বুখারী, হাদীস: ৯৬৯)
এমনকি, রমজানের শেষ দশ রাতেও এত ফজিলত নেই, যতটা এই জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে আছে!
তাহলে আমরা কি বসে থাকব? অবশ্যই না।
চলুন এখন দেখে নিই, এই ১০ দিনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল - যা করলে আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ সূরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াতের তাৎপর্য।
আমল-১। তওবা ও ইসতিগফার (পাপমুক্ত জীবন শুরু)
এই প্রথম কাজটাই হওয়া উচিত - নিজেকে পবিত্র করা।
পূর্বের গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে কাঁদুন, ক্ষমা চান। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ক্ষমা করবেন।
“হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমার দাস, আমি ভুল করেছি।”
এভাবে প্রতিদিন কিছু সময় ইসতিগফারে সময় কাটান। আপনার অন্তর নরম হবে, চোখে অশ্রু আসবে ইনশাআল্লাহ।
আমল-২। তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল, তাসবিহ পাঠ করা
জিলহজ মাসের প্রথম এই ১০ দিনে নিয়মিত বলা উচিতঃ
- তাকবিরঃ আল্লাহু আকবার
- তাহমিদঃ আলহামদুলিল্লাহ
- তাহলিলঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- তাসবিহঃ সুবহানাল্লাহ
রাসূল (সা.) সাহাবীদের বলতেন এই ১০ দিনে বাজার, ঘর, রাস্তায় জোরে জোরে এই যিকিরগুলো করতে।
প্রয়োজনে আপনার মোবাইলে একটি রিমাইন্ডার করে দিন যেন ভুলে না যান!
আমল-৩। নিয়মিত নামাজ আদায় করা (সুন্নাতসহ)
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন অর্থাৎ এই পবিত্র দিনগুলিতে নামাজে অবহেলা করা খুবই অন্যায়।
শুধু ফরজ না, বরং সুন্নাত, নফল ও তাহাজ্জুদসহ সকল নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
বিশেষ করে, ফজরের পর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত যিকিরে বসে থাকা - এটা একটি হজ্ব করা বা একটি উমরা হজ্ব করার সমান সাওয়াব এনে দেয়।
আমল-৪। কুরআন তেলাওয়াত বৃদ্ধি করা
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ এই দিনে আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত ২ রুকু করে কুরআন তেলাওয়াত করেন, তাহলে সওয়াবের পাহাড় জমে যাবে। তাই প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট করে হলেও সময় রাখুন কুরআন তেলাওয়াতের জন্য।
ছোট সূরা দিয়েই শুরু করুন - সূরা ইয়াসিন, সূরা মুলক, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস ইত্যাদি।
আমল-৫। রোযা রাখা (বিশেষ করে ৯ তারিখ)
জিলহজ মাসের প্রথম এই ১০ দিনের মধ্যে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত আছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ আরাফার দিন (৯ই জিলহজ)।
হাদিসে আছেঃ
“আরাফার দিনের একটি রোযা এক বছর আগের ও এক বছর পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)
যারা হজ্ব করতে পারছেন না, তারা অবশ্যই এই রোযা রাখুন।
আমল-৬। দান-সদকা করা
জিলহজ মাসের এই প্রথম ১০ দিন সময়ে আপনি যদি এক টাকা দান করেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেন।
আপনি গরীবকে খাবার দিতে পারেন, ফ্রি কুরআন বিতরণ করতে পারেন, এমনকি অনলাইন ইসলামিক সংস্থায় টাকাও দিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধির দোয়া - ধৈর্য ধারণ করার দোয়া আরবি
আমল-৭। কুরবানির নিয়ত ও প্রস্তুতি
আল্লাহ বলেনঃ
“কুরবানির পশুর রক্ত ও মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে আপনার তাকওয়া।”
(সূরা হজ: ৩৭)
তাই কুরবানির নিয়ত করুন, যদি সামর্থ্য থেকে থাকে।
আর হ্যাঁ, ১লা জিলহজ থেকে চুল-দাড়ি, নখ না কাটার নিয়ম মনে রাখবেন যারা কুরবানি দিবেন।
আমল-৮। বেশি বেশি দোয়া করা
জিলহজ মাসের প্রথম এই ১০ দিনে আপনার করা প্রতিটি দোয়া আল্লাহ কবুল করতে চান।
আপনি চাইলেই একটা দোয়া লিস্ট বানাতে পারেন –পরিবার, পড়াশোনা, রিজিক, সুস্থতা, গুনাহ মাফ, জান্নাত।
নিজের হাতে লিখে নিনঃ “আল্লাহ, তুমি আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল করো।”
আমল-৯। ভাল কাজ করা ও অন্যকে উৎসাহ দেয়া
রাসূল (সা.) বলতেন, “তুমি তোমার ভাইয়ের মুখে হাসি ফোটাও - এটাও সাদকা।”
কারো ভুল ধরিয়ে দিন, গরীবকে সহায়তা করুন, কুরআনের আয়াত শেয়ার করুন।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ইসলামিক কনটেন্ট শেয়ার করুন এই ১০ দিনে।
আমল-১০। গুনাহ থেকে বাঁচা (সিন ফুল থিংস থেকে দূরে থাকা)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল - গুনাহ থেকে দূরে থাকা। মিথ্যা, গীবত, অশ্লীলতা, হারাম ইনকাম, নোংরা কথা, ফেসবুকে সময় নষ্ট করা - এগুলো বন্ধ করুন।
এই দিনগুলোতে নিজেকে একটু আইসোলেট করে রাখুন - কুরআন, যিকির, রোযা আর নামাজের মধ্যে সময় কাটান।
আরো পড়ুনঃ কোরআন বোঝা কি কঠিন? সহজভাবে কোরআন বোঝার উপায় ও গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
শেষ কথাঃ এই দশ দিনেই নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেন!
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো - আল্লাহর কাছে আপনার রেজাল্ট কার্ড দেখানোর সময়।
আপনি এই সময়ে যা করবেন, তা হয়ত আপনার পুরো জীবন বদলে দিতে পারে।
শুধু ইসলামিক পয়েন্টেই নয়, জিলহজ মাসের প্রথম এই ১০ দিনের ১০টি আমলের মাধ্যমে আপনার মানসিক প্রশান্তি, রিজিকের বরকত, পরিবারে শান্তি সবই আসতে পারে।
আর হ্যাঁ, আপনার বন্ধুকে এই আর্টিকেলটি ফরোয়ার্ড করতে ভুলবেন না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url