রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন? জেনে নিন বিস্তারিত।
রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন? জেনে নিন বিস্তারিত।
আপনারা যারা “রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাবেন?” এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন কোলেস্টেরলের ওষুধ কতদিন খাওয়া উচিত? স্ট্যাটিন বা অন্যান্য ওষুধ নিরাপদ কিনা? কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ওষুধের সময়কাল, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিকল্প উপায় সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাবেন?
বর্তমানে আমাদের জীবনে ব্যস্ততা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে। উচ্চ কোলেস্টেরল শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে, বিশেষ করে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও রক্তনালীর রোগ। অনেক সময় ডাক্তার কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ওষুধ, বিশেষ করে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন থাকে—এই ওষুধ কতদিন খেতে হবে? সারাজীবন খেতে হবে নাকি কিছুদিন পর বন্ধ করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে কোলেস্টেরল কী, কেন এটি বাড়ে এবং ওষুধ কিভাবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা আম কি লিভারের জন্য ভাল? জেনে নিন কাঁচা আমের ৭টি উপকারিতা সম্পর্কে।
কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল একটি চর্বিজাতীয় পদার্থ যা আমাদের শরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং হরমোন ও ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের দুটি মূল প্রকারঃ
- LDL (Low-Density Lipoprotein): খারাপ কোলেস্টেরল, যা ধমনিতে জমে গিয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে।
- HDL (High-Density Lipoprotein): ভালো কোলেস্টেরল, যা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে লিভারে পৌঁছে দেয়।
যখন শরীরে LDL মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন হৃদরোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
কোলেস্টেরল কেন বাড়ে?
কোলেস্টেরল বাড়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে:
- ফাস্ট ফুড, চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার খাওয়া
- শারীরিক পরিশ্রম না করা
- ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন
- পারিবারিক জিনগত প্রভাব
কোলেস্টেরল কমাতে ওষুধ কখন লাগে?
সাধারণত জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে যখন কোলেস্টেরল মাত্রা খুব বেশি হয়, তখন শুধুমাত্র ডায়েট ও ব্যায়াম যথেষ্ট হয় না। তখন ডাক্তার স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।
সাধারণত যে ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োজন হয়ঃ
- মোট কোলেস্টেরল ২৪০ mg/dL এর বেশি
- LDL কোলেস্টেরল ১৬০ mg/dL বা তার বেশি
- হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে
- ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেশারের সঙ্গে কোলেস্টেরল বেড়েছে
- পারিবারিকভাবে উচ্চ কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরলের ওষুধ কতদিন খেতে হয়?
এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর নেই, কারণ এটি একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলোঃ
১। স্থায়ীভাবে ওষুধ খাওয়াঃ
যেসব রোগীর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে (যেমন আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বা বহু বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন), তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ স্থায়ীভাবে চালিয়ে যেতে হতে পারে।
২। সীমিত সময়ের জন্যঃ
কিছু ক্ষেত্রে যখন ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমে যায়, তখন ডাক্তার ওষুধ বন্ধ করতে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে এটি শুধুমাত্র নিয়মিত পরীক্ষা ও ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
৩। পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণঃ
ওষুধ খাওয়ার সময় প্রতি ৩-৬ মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা উচিত। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ওষুধ চালিয়ে যাওয়া বা বন্ধ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাকে কখন কী চিকিৎসা ! একটি গুরুত্বপূর্ণ গাইড জেনে নিন।
স্ট্যাটিন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
স্ট্যাটিন ওষুধ সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেঃ
- পেশীতে ব্যথা বা দুর্বলতা
- লিভারের সমস্যা (অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে)
- রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে
- স্মৃতিভ্রষ্টতা বা মানসিক অবসাদ (কিছু ক্ষেত্রে)
তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবসময় হয় না, এবং এগুলোর বেশিরভাগই সাময়িক।
ওষুধ ছাড়াও কোলেস্টেরল কমানোর উপায়ঃ
যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি না হয়, তাহলে নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবঃ
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ
- কম চর্বিযুক্ত ও তাজা ফলমূল-সবজি খাওয়া
- ট্রান্স ফ্যাট ও রেড মিট এড়িয়ে চলা
- ওটস, বাদাম ও মসুর ডাল বেশি খাওয়া
-
নিয়মিত ব্যায়ামঃ
- সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা বা জগিং
- যোগাসন বা সাইক্লিংও ভালো বিকল্প
-
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ
- অতিরিক্ত ওজন কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন
-
মানসিক চাপ কমানো
- মেডিটেশন বা পর্যাপ্ত ঘুম
কোলেস্টেরল নিয়ে ভুল ধারণাঃ
অনেকেই মনে করেন একবার ওষুধ খাওয়া শুরু করলে আর বন্ধ করা যায় না। এটি সবসময় ঠিক নয়। তবে ওষুধ বন্ধ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক ১০টি সবুজ খাবার সম্পর্কে জেনে নিন।
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে ওষুধ খাওয়া অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে, তবে এটি কতদিন খেতে হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগীর অবস্থা, বয়স, অন্যান্য রোগের উপস্থিতি এবং জীবনধারার উপর। কখনোই নিজে থেকে ওষুধ শুরু বা বন্ধ করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল চাবিকাঠি।
যাইহোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url