হার্ট অ্যাটাকে কখন কী চিকিৎসা ! একটি গুরুত্বপূর্ণ গাইড জেনে নিন।
হার্ট অ্যাটাকে কখন কী চিকিৎসা ! একটি গুরুত্বপূর্ণ গাইড জেনে নিন।
হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া বর্তমান সময়ে একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্রাণ হারান। হার্ট অ্যাটাক সময়মতো চিকিৎসা না পেলে জীবনহানির ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং দ্রুত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী (coronary artery) ব্লক হয়ে যায়, ফলে হৃদপিণ্ডের একটি অংশ অক্সিজেনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যায়, তত বেশি জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গঃ
হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো অনেক সময় হালকা হতে পারে, আবার অনেক সময় অত্যন্ত তীব্র হতে পারে। নিচে সাধারণ কিছু উপসর্গ দেওয়া হলোঃ
- বুকের মাঝখানে চাপ বা ব্যথা (চেপে ধরা বা ভারী বস্তু চাপার মতো অনুভূতি)
- ব্যথা কাঁধ, বাহু, ঘাড়, পিঠ বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে
- শ্বাসকষ্ট
- হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘাম
- বমিভাব বা বমি
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
কখন কী চিকিৎসা নিতে হবে?
১। উপসর্গ দেখা মাত্রই জরুরি পদক্ষেপঃ
- রোগীকে অবিলম্বে বসিয়ে দিন বা শুয়ে দিন।
- ১৬০-৩০০ মি.গ্রা অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খেতে দিন (যদি রোগীর ওষুধে অ্যালার্জি না থাকে)।
- নিকটস্থ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে পাঠান বা রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
২। হাসপাতালে চিকিৎসাঃ
- ইসিজি (ECG): রোগীর হৃদস্পন্দন বিশ্লেষণ করে হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করা হয়।
- ব্লাড টেস্টঃ ট্রোপোনিন (Troponin) নামক এক ধরনের প্রোটিন পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় হৃদযন্ত্রের ক্ষতির মাত্রা।
- থ্রম্বোলাইটিক থেরাপিঃ রক্ত জমাট বাঁধা সরাতে ওষুধ দেওয়া হয়।
- এঞ্জিওপ্লাস্টিঃ ধমনীতে ব্লক থাকলে স্টেন্ট বসিয়ে তা খুলে দেওয়া হয়।
- করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি (CABG): গুরুতর ক্ষেত্রে ব্লক ধমনী বাইপাস করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
চিকিৎসার পরে করণীয়ঃ
হার্ট অ্যাটাকের পরে জীবনধারা পরিবর্তন ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরীঃ
- ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণঃ রক্ত পাতলা করা, কোলেস্টেরল কমানো ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তনঃ ধূমপান ত্যাগ, সুষম খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি।
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণঃ মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম উপকারী হতে পারে।
- নিয়মিত চেকআপঃ হার্টের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
কখন হাসপাতালে যাবেন?
- বুকের ব্যথা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে
- ব্যথা কাঁধ বা বাহুতে ছড়িয়ে পড়লে
- শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে
- উপসর্গগুলোর সঙ্গে ঘাম বা বমিভাব থাকলে
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণই হতে পারে জীবন রক্ষাকারী হাতিয়ার। যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, সময়মতো চিকিৎসাই পারে প্রাণ বাঁচাতে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url