বাবা হিসেবে সন্তানকে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই শেয়ার করা উচিত!
বাবা হিসেবে সন্তানকে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই শেয়ার করা উচিত – ভালোবাসা, শিক্ষা ও জীবনের পাঠ।
আপনারা যারা "বাবা হিসেবে সন্তানকে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই শেয়ার করা উচিত!" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, একজন বাবার জীবনে সন্তানের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করা অত্যন্ত জরুরি। এই আর্টিকেলে গল্পের ছলে জানুন সেই ৫টি বিষয় যা একজন বাবা হিসেবে আপনার সন্তানের সঙ্গে অবশ্যই ভাগ করে নেওয়া উচিত।
চলুন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, বাবা হিসেবে সন্তানকে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই শেয়ার করা উচিত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।ভূমিকাঃ বাবা হিসেবে সন্তানকে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই শেয়ার করা উচিত!
(একজন রাজশাহীর বাবার গল্পে ফুটে উঠেছে জীবনের শিক্ষা)
গল্পটা রাজশাহীর এক মফস্বল শহরের। পদ্মার পাড় ঘেঁষে ছোট্ট একটা বাড়ি। বাড়ির মালিক রফিকুল ইসলাম – পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক, কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয়? তিনি একজন বাবা।
ছেলেটা অবাক। এতদিনে বাবা এমনভাবে কখনো বলেননি কিছু। কিন্তু সেদিনের সেই বিকেলটা হয়ে গেল একটা স্মরণীয় বিকেল। আজ আমি আপনাদের শোনাবো সেই পাঁচটি বিষয়ের কথা, যা একজন বাবা হিসেবে সন্তানের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করা উচিত – যেমনটা রফিকুল সাহেব করেছিলেন জুবায়েরের সঙ্গে।
আরো পড়ুনঃ সন্তানের সফলতার গোপন রহস্য ! পারিবারিক নিয়ম ও মূল্যবোধের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
১। ভুল করলেও ভেঙে পড়ো না – জীবন শেখায় ব্যর্থতায়।
“জীবনে আমি অনেক ভুল করেছি, জুবায়ের,” বললেন রফিকুল সাহেব, “কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ভুলকে ভয় পাওয়া।”
বাবা হিসেবে সন্তানকে এটা বোঝানো খুব জরুরি যে, ব্যর্থতা জীবনেরই অংশ। সন্তান যদি জানে তার বাবা-ও জীবনে কখনো হার মানতেন, তবে সে নিজেও সাহস পাবে উঠে দাঁড়াতে।
উদাহরণঃ
“আমি প্রথম স্কুলে চাকরি পাইনি,” রফিকুল সাহেব বললেন, “তখন ভেবেছিলাম সব শেষ। কিন্তু পরে বুঝেছি, ওটাই ছিল শুরু।”
২। মানবিকতা সব কিছুর ওপরে – মানুষ হওয়াটাই আগে।
রফিকুল সাহেব বলেন, “তোমার ডিগ্রি, চাকরি, পজিশন – সবকিছু মূল্যহীন যদি তুমি একজন ভালো মানুষ না হও।”
আজকের যুগে, যেখানে প্রতিযোগিতা আর লাভ-লোকসান সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, বাবা হিসেবে মানবিকতার শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট গল্পঃ
জুবায়ের ছোটবেলায় এক ভিখারিকে মার খেতে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তখন রফিকুল সাহেব তাকে বলেছিলেন, “সাহসী হওয়া মানে দুর্বলকে রক্ষা করা।”
৩। টাকা জীবন নয়, কিন্তু টাকার গুরুত্ব বোঝো।
“টাকায় সব হয় না, কিন্তু টাকা না থাকলে অনেক কিছু হয় না – এটা বুঝো,” বললেন রফিকুল সাহেব।
এই লাইনটা যেন সন্তানের জীবনের মন্ত্র হয়। বাবা হিসেবে টাকার সঠিক ব্যবস্থাপনা, সঞ্চয়, খরচের শিক্ষা – এগুলো শেয়ার করা উচিত।
রিয়েল লাইফ ইনপুটঃ
“তোমার মা আর আমি বিয়ের পরে তিন বছর ভাড়া বাড়িতে ছিলাম। কারণ আমরা জমিয়ে একটা জমি কিনব, সেই চিন্তা ছিল।”
আরো পড়ুনঃ বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের কতটা স্বাধীনতা দেবেন? একটি বাস্তব ভিত্তিক অভিভাবক নির্দেশনা সম্পর্কে জেনে নিন।
৪। ভালোবাসা লুকিয়ে নয়, বুঝিয়ে দাও
রফিকুল সাহেব বললেন, “ছেলেরা নাকি কাঁদে না, সেটা তো মিথ্যে। আমি কেঁদেছিলাম যেদিন তুমি প্রথম হাঁটতে শিখেছিলে।”
একজন বাবা যদি নিজের আবেগ প্রকাশ করতে পারে, তাহলে সন্তানও সাহস পায় নিজেকে খুলে বলতে।
ছোট মুহূর্তের গল্পঃ
“যখন তুমি হজম না করতে পেরে রাতে কাঁদতে, আমি তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। মা ভাবত আমি ঘুমাচ্ছি। না রে, ঘুমাইনি।”
৫। দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তার – শুধু নিজের না, সবার চোখে দেখো।
“তুমি যা দেখো, সেটাই সব নয়। অন্যরাও কী দেখছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করো,” বললেন রফিকুল সাহেব।
একটা উদার ও বাস্তবমুখী চিন্তা শেখাতে হলে বাবা হিসেবে চাই চিন্তার পরিধি বিস্তৃত করা।
গল্পঃ
জুবায়ের একদিন বলেছিল, “বাবা, আমি রাজনীতিতে যেতে চাই।” তখন রফিকুল সাহেব বলেননি “না”, বরং জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি কী বদলাতে চাও?”
শেষ কথাঃ গল্পটা থামলেও শিক্ষা চলবে।
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, রফিকুল সাহেবের সেই বিকেলের কথাগুলো জুবায়ের সারাজীবন মনে রাখবে। একজন বাবা হিসেবে সন্তানকে শুধু বড় করে তোলা নয়, তাকে জীবনের জন্য প্রস্তুত করাটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
আপনি যদি একজন বাবা হন, আজই সময়, সন্তানের সঙ্গে এই পাঁচটি বিষয় শেয়ার করার। কারণ জীবন খুব ছোট – আর একজন সন্তানের জীবনে আপনি হচ্ছেন তার প্রথম হিরো।
আপনার মতামত কী? আপনি কোন বিষয়টি আপনার সন্তানের সঙ্গে আগে ভাগে শেয়ার করেছেন? নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
আরও এই রকমের গল্পভিত্তিক, জীবনঘনিষ্ঠ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইট ভিজিট করুন। www.baneswarit.com
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url