ত্বকের খসখসে ভাব দূর করবে যেসব তেল | ত্বক মসৃণ রাখার প্রাকৃতিক গাইডলাইন
ত্বকের খসখসে ভাব দূর করবে যেসব তেল | পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন জেনে নিন।
শীতকালে বা সারাবছরই অনেকের ত্বক খসখসে হয়ে যায়, যা কেবল অস্বস্তির কারণ নয় বরং এটি ত্বকের স্বাস্থ্যহানিও ঘটাতে পারে। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে প্রাকৃতিক তেলগুলো খুবই কার্যকর। এগুলো ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা সরবরাহ করে এবং মসৃণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু প্রাকৃতিক তেলের কথা জানব, যেগুলো ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে দারুণ কার্যকর।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, রাতে ভালো ঘুমের জন্য উপকারী খাবারগুলো | ঘুম না আসলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত সম্পর্কে বিস্তারিত।ভূমিকাঃ ত্বকের খসখসে ভাব দূর করবে যেসব তেল
শীতকাল হোক বা গরম, ত্বকের খসখসে ভাব আমাদের অনেকেরই এক সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে যখন বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়, তখন ত্বক তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে এবং রুক্ষ, নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বাজারে নানা ধরনের ক্রিম বা লোশন পাওয়া গেলেও, এগুলোর বেশিরভাগেই কেমিক্যাল উপাদান থাকে যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া কিছু তেল আছে যেগুলো ত্বকের গভীর স্তর পর্যন্ত পুষ্টি যোগায়, আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
যেমন-নারকেল তেল, জলপাই তেল, বাদাম তেল, তিল তেল ও তিসি তেল হলো এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান, যেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা ও খসখসে ভাব দূর হয়। এগুলোর ভেতরে থাকা ভিটামিন ই, ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে, মৃত কোষ দূর করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
এই গাইডলাইনে আমরা জানব-কোন তেল ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারী, কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করবেন, এবং কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের খসখসে ভাবকে বিদায় জানানো যায়। এটি সম্পূর্ণ ঘরোয়া ও নিরাপদ উপায়, যা আপনার ত্বককে করে তুলবে আরও কোমল ও সতেজ।
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বক সুন্দর, কোমল ও উজ্জ্বল রাখার সেরা উপায়
১। নারকেল তেল (Coconut Oil)
নারকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এতে লরিক অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহারঃ রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। সকালে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতাঃ ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং নরম ও কোমল রাখে।
২। অলিভ অয়েল (Olive Oil)
অলিভ অয়েল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের কোষ মেরামত করে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ব্যবহারঃ গোসলের আগে বা পরে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
উপকারিতাঃ শুষ্ক ত্বককে মসৃণ করে এবং সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
৩। বাদাম তেল (Almond Oil)
বাদাম তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, যা ত্বকের গভীরে পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি খুব হালকা এবং সহজে ত্বকে মিশে যায়।
ব্যবহারঃ ত্বকে ম্যাসাজ করুন এবং রাতে রেখে দিন।
উপকারিতাঃ শুষ্কতা কমায় এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।
৪। আরগান তেল (Argan Oil)
আরগান তেলকে "তরল সোনা" বলা হয়। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে।
ব্যবহারঃ কয়েক ফোঁটা তেল হাতের তালুতে নিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
উপকারিতাঃ ত্বককে মসৃণ ও নরম রাখে।
৫। জোজোবা তেল (Jojoba Oil)
জোজোবা তেল ত্বকের প্রাকৃতিক সিবামের মতো কাজ করে এবং শুষ্কতা কমায়। এটি নন-কমেডোজেনিক, তাই ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্যও নিরাপদ।
ব্যবহারঃ সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করুন।
উপকারিতাঃ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং খসখসে ভাব দূর করে।
৬। অ্যাভোকাডো তেল (Avocado Oil)
অ্যাভোকাডো তেল প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন এ, ডি এবং ই-তে সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের পুষ্টি জোগায় এবং শুষ্কতা দূর করে।
ব্যবহারঃ সপ্তাহে ২-৩ দিন ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
উপকারিতাঃ শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে।
৭। সূর্যমুখী তেল (Sunflower Oil)
সূর্যমুখী তেল লিনোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহারঃ গোসলের পর ত্বকে ব্যবহার করুন।
উপকারিতাঃ দ্রুত শোষিত হয় এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।
৮। জলপাই তেল (Olive Oil)
জলপাই তেলে রয়েছে ভিটামিন–E ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। স্নানের আগে হালকা গরম জলপাই তেল পুরো শরীরে ম্যাসাজ করলে ত্বকের শুষ্কতা অনেকটা কমে যায়। এটি ত্বককে শুধু নরমই করে না, প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতাও ফিরিয়ে আনে।৯। তিসি তেল (Flaxseed Oil)
১০। আরগান তেল (Argan Oil)
আরো পড়ুনঃ শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহ্।
ব্যবহারের টিপসঃ
-
প্রতিদিন গোসলের পর হালকা ভেজা ত্বকে তেল ব্যবহার করুন।
-
ঘুমানোর আগে মুখে অল্প তেল লাগিয়ে রাখলে সকালে ত্বক আরও মসৃণ হয়।
-
অ্যালার্জি থাকলে আগে ছোট জায়গায় টেস্ট করে নিন।
কেন প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করবেন?
ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা শুধু একটি সৌন্দর্য রুটিন নয়, এটি হলো ত্বকের প্রকৃত পুষ্টির উৎস। আমাদের ত্বক প্রতিদিন ধুলো, রোদ, ও দূষণের সংস্পর্শে এসে তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারায়। এই সময় প্রাকৃতিক তেল ত্বকের গভীরে পৌঁছে আর্দ্রতা ধরে রাখে, কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং ত্বককে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। নারকেল, জলপাই, বাদাম বা তিসি তেলের মতো তেলে থাকে ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড - যা ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং রুক্ষতা দূর করে। কেমিক্যালযুক্ত ক্রিমের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় প্রাকৃতিক তেল সব ধরনের ত্বকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর। নিয়মিত প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে, দাগ-ছোপ হালকা হয় এবং মুখে ফিরে আসে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। তাই সুন্দর ও সুস্থ ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক তেলই হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী।
ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে ত্বকে তেল লাগানোর সঠিক সময় ও পদ্ধতি
শুষ্ক ও খসখসে ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল রাখতে তেল ব্যবহার করা অন্যতম প্রাকৃতিক উপায়। তবে শুধু তেল লাগালেই হবে না-এর সঠিক সময় ও পদ্ধতি জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকে তেল লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় হলো গোসলের পরপরই, যখন ত্বক সামান্য ভেজা থাকে। এই সময় ত্বকের রন্ধ্র (pores) খোলা থাকে, ফলে তেল সহজে শোষিত হয়ে ত্বকের ভেতরে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
গোসলের পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল, জলপাই তেল, বা বাদাম তেল নিয়ে হালকা হাতে বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করুন। মুখ, হাত, পা ও শুষ্ক অংশে ধীরে ধীরে ঘষে মিশিয়ে দিন। রাতে ঘুমানোর আগে আবারো সামান্য তেল লাগালে ত্বক রাতভর আর্দ্র থাকে এবং সকালে ত্বক হয় কোমল ও উজ্জ্বল।
তবে অতিরিক্ত তেল লাগানো থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে ত্বক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে মুখে তেল লাগানোর সময় অল্প পরিমাণ ব্যবহার করুন। শীতকালে দিনে একবার ও রাতে ঘুমানোর আগে তেল ব্যবহার করা সবচেয়ে কার্যকর।
সঠিক নিয়মে নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়, ত্বক থাকে প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল ও মোলায়েম।
ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে তেল ব্যবহারে সতর্কতা
ত্বকের যত্নে তেল ব্যবহার নিঃসন্দেহে উপকারী, তবে কিছু সতর্কতা না মানলে এটি উল্টো ক্ষতির কারণও হতে পারে। প্রথমেই জানা দরকার-প্রতিটি ত্বক আলাদা, তাই অন্যের জন্য উপকারী কোনো তেল আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া, অ্যালার্জি বা ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নতুন কোনো তেল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই হাতে বা কানের পেছনে অল্প করে লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা ভালো। এতে বোঝা যায় তেলটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত কিনা।
অতিরিক্ত তেল ব্যবহারও ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে ব্রণ বা ফুসকুড়ির ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। রাতে ঘুমানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করে অল্প তেল ম্যাসাজ করুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া নিম্নমানের বা রাসায়নিক মেশানো তেল ব্যবহার একেবারেই অনুচিত-সবসময় প্রাকৃতিক ও বিশুদ্ধ তেল বেছে নিন। যদি ত্বকে অস্বস্তি, লালচে ভাব বা চুলকানি দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে আপনার ত্বক উজ্জ্বল রাখতে কমলা লেবুর খোসার জাদুকরী ব্যবহার
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, ত্বকের যত্ন মানে কেবল দামি প্রসাধনী ব্যবহার নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে পুষ্ট করা। ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে প্রাকৃতিক তেলগুলো নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। সঠিক তেল এবং নিয়মিত যত্ন ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। নারকেল, জলপাই, বাদাম বা তিসি-এই সব তেল প্রকৃতির দান, যা ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা এনে খসখসে ভাব দূর করে। নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক হারানো কোমলতা ফিরে পায় এবং থাকে দীপ্তিময়। তবে সচেতন ব্যবহারই এখানে মূল চাবিকাঠি। নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক তেল নির্বাচন করুন, নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। এতে আপনার ত্বক হবে মসৃণ, কোমল ও প্রাণবন্ত-একেবারে স্বাভাবিক সৌন্দর্যের আভায় ভরপুর।
তাই রাসায়নিক ক্রিম নয়, এখন সময় নিজের ত্বককে প্রাকৃতিক তেলের ভালোবাসা দেওয়ার। পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রচুর পানি পান করুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url