কষ্টের সহ্য ক্ষমতা কতটুকু? সহ্য হারিয়ে ফেললে কী করবেন – জানুন বিস্তারিত
কষ্টের সহ্য ক্ষমতা কতটুকু? সহ্য হারিয়ে ফেললে কী করবেন – জানুন বিস্তারিত
কষ্টের পরিমাণ কতটুকু হলে সহ্য ক্ষমতা থাকে, আর যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে কি করব?
মানুষের জীবন কখনো আনন্দে ভরা, আবার কখনো দুঃখ-কষ্টে ডুবে যায়। আল্লাহ মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর মধ্যে কষ্ট সহ্য করার একটি স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে। তবে প্রশ্ন হলো – কষ্টের সীমা কতটুকু হলে মানুষ তা সহ্য করতে পারে? আর যদি একসময় মনে হয় সহ্য ক্ষমতা ফুরিয়ে গেছে, তখন কী করব?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় দিকগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কবে কোনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা উচিত?
মানুষের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা কেমন?
প্রতিটি মানুষের সহ্য ক্ষমতা আলাদা। কারো মানসিক শক্তি বেশি, আবার কারো তুলনামূলকভাবে কম।
১। শারীরিক কষ্টঃ
শরীরের অসুস্থতা, ব্যথা বা দুর্ঘটনা মানুষকে কষ্ট দেয়। তবে চিকিৎসা, বিশ্রাম ও ধৈর্যের মাধ্যমে এই কষ্ট অনেকাংশে সহ্য করা সম্ভব।
২। মানসিক কষ্টঃ
সম্পর্কের ভাঙন, দারিদ্র্য, প্রিয়জন হারানো বা ব্যর্থতা মানুষকে গভীর মানসিক কষ্টে ফেলে। এখানেই আসল সহ্য ক্ষমতার পরীক্ষা হয়।
৩। সামাজিক কষ্টঃ
অন্যের কটূক্তি, সমাজে অবহেলা বা হীনমন্যতা অনেকের মনে চাপ ফেলে।
৪। আধ্যাত্মিক কষ্টঃ
কখনো মানুষ মনে করে তার জীবন অন্যায়ভাবে চলছে। তখন বিশ্বাস ও ঈমান দুর্বল হয়ে পড়লে কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
কষ্ট সহ্য করার সীমা কোথায়?
-
বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীর কষ্ট সামলানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে কিছু হরমোন নিঃসরণ করে (যেমন – এন্ডরফিন, সেরোটোনিন)।
-
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়, আল্লাহ মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কষ্ট দেন না (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৬)।
-
তাই বাস্তবে কষ্টের সীমা নির্ধারিত হয় ব্যক্তির মানসিক শক্তি, বিশ্বাস এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী।
সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে কী করবেন?
কখনো কখনো কষ্ট এত বেড়ে যায় যে মানুষ ভেঙে পড়ে। তখন মনে হয় আর সহ্য করা সম্ভব নয়। এসময় যা করা উচিত –
১। ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন
-
কষ্ট কখনো স্থায়ী নয়। কোরআনে বলা হয়েছে – “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি।” (সূরা আশ-শরাহ, আয়াত ৫-৬)।
-
তাই আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধরলে পরিস্থিতি সহজ হয়ে যায়।
২। নিজেকে সময় দিন
-
দুঃখের সময়ে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিপদজনক। সময়ের সাথে সাথে মানসিক চাপ কমে যায়।
৩। প্রিয়জনের সাথে কথা বলুন
-
একা একা কষ্ট বহন না করে পরিবার, বন্ধু বা বিশ্বস্ত কারও সাথে মনের কথা শেয়ার করুন। এতে মন হালকা হবে।
৪। সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না
-
যদি মনে হয় কষ্ট অসহনীয় হয়ে গেছে, তাহলে মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সেলর বা হুজুরের সাথে আলোচনা করুন।
৫। ইবাদতে মনোযোগ দিন
-
নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া হৃদয়কে শান্তি দেয়। আধ্যাত্মিক শক্তি মানসিক কষ্ট সহ্য করার সবচেয়ে বড় উপায়।
৬। শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন
-
ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত রুটিন মানসিক চাপ কমায়।
আরো পড়ুনঃ মন ভালো করার ৮টি কার্যকর উপায়
কেন মানুষ সহ্য ক্ষমতা হারায়?
-
অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চাপ
-
প্রিয়জন হারানো
-
অর্থনৈতিক সংকট
-
আত্মবিশ্বাসের অভাব
-
আল্লাহর ওপর আস্থা কমে যাওয়া
এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত মানসিক শক্তি গড়ে তোলা।
কষ্ট সহ্য করার উপকারিতা
যদিও কষ্ট মানুষকে কাঁদায়, তবুও এর কিছু উপকারিতা রয়েছে –
-
মানুষকে ধৈর্যশীল করে তোলে
-
অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বাড়ায়
-
দোয়া ও ইবাদতে মনোযোগী করে
-
জীবনের প্রকৃত মূল্য বোঝায়
-
অন্যের কষ্ট বুঝতে সাহায্য করে
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কষ্ট
-
হাদিসে এসেছে, “মুমিনের দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে তার গুনাহ মাফ হয়।”
-
অর্থাৎ, আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দেন পরীক্ষা করার জন্য, কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি গুনাহ ক্ষমা ও পুরস্কার দান করেন।
আরো পড়ুনঃ মনের ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে যেসব কার্যকর উপায়
উপসংহার
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, কষ্ট মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ মানুষকে তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেন না। তাই সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য, ইবাদত, প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ এবং মানসিক সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে কষ্ট জয় করা সম্ভব।
অতএব, কষ্টকে ভয় না পেয়ে সেটিকে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। কারণ প্রতিটি দুঃখের পরেই আসে স্বস্তি ও শান্তি।
[আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে পারেন]
কীভাবে এই আর্টিকেলটি আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url