চোখেও স্ট্রোক হয় ! লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
চোখেও স্ট্রোক হয় ! লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
আপনারা যারা ”চোখেও স্ট্রোক হয় ! লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা” সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, চোখে স্ট্রোক বা রেটিনাল স্ট্রোক একটি বিপজ্জনক অবস্থা, যা আচমকা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই জেনে নিন চোখের স্ট্রোকের লক্ষণ, কারণ, ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, সন্তানের চোখ মোবাইল থেকে বইয়ের দিকে ফেরাবেন যেভাবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।ভূমিকাঃ
আমরা সাধারণত স্ট্রোক বলতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটে যাওয়া সমস্যা বুঝি। তবে অনেকেই জানেন না যে চোখেও স্ট্রোক হতে পারে। চোখের স্ট্রোক (Eye Stroke) হলো এক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা, যা অপটিক নার্ভ বা রেটিনাতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে ঘটে। এটি চিকিৎসায় অবহেলা করলে স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন? জেনে নিন বিস্তারিত।
চোখের স্ট্রোক কী?
চোখের স্ট্রোকের মূল কারণ হলো রেটিনার রক্তবাহী ধমনী বা শিরায় বাধা সৃষ্টি হওয়া। রেটিনা হলো চোখের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আলোর সংকেতকে মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়। রেটিনাতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চোখের স্ট্রোক মূলত দু’ধরনের হতে পারে। যেমনঃ
১। সেন্ট্রাল রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন (CRAO): রেটিনার প্রধান ধমনীর রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২। সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেইন অক্লুশন (CRVO): রেটিনার প্রধান শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা।
চোখের স্ট্রোকের লক্ষণঃ
চোখের স্ট্রোক হঠাৎ করে হতে পারে এবং অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারেন না। সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ
১। দৃষ্টিশক্তি হ্রাসঃ এক চোখে হঠাৎ ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলা।
২। কালো বা সাদা দাগঃ চোখের সামনে কালো বা সাদা দাগের উপস্থিতি।
৩। বিকৃত দৃশ্যঃ কোনো কিছু বাঁকা বা বিকৃতভাবে দেখা।
৪। আঁধার অনুভূতিঃ চোখে আলোর অনুভূতি হঠাৎ কমে যাওয়া।
৫। ব্যথাঃ যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখে স্ট্রোকের কারণে ব্যথা হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে হালকা ব্যথা হতে পারে।
কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ
চোখের স্ট্রোকের কারণগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
১। রক্তনালির বাধাঃ উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২। কলেস্টেরলঃ রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল জমে ধমনিতে বাধা সৃষ্টি করে।
৩। হার্টের সমস্যাঃ আরিথমিয়া বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
৪। ধূমপানঃ ধূমপান রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে।
৫। স্থূলতা ও সেডেন্টারি লাইফস্টাইলঃ অতিরিক্ত ওজন ও কম শারীরিক কার্যকলাপের কারণে রক্তনালীতে চাপ বাড়ে।
চিকিৎসাঃ
চোখের স্ট্রোক একটি জরুরি চিকিৎসার বিষয়। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসার ধাপগুলো হলোঃ
১। ওষুধঃ রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হয়। রক্ত জমাট বাঁধা রোধে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ কার্যকর।
২। অক্সিজেন থেরাপিঃ চোখে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
৩। ইঞ্জেকশনঃ রেটিনার ফোলা কমাতে চোখে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন দেওয়া হয়।
৪। লেজার থেরাপিঃ রক্তনালির জমাট রক্ত সরাতে লেজার থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
৫। লাইফস্টাইল পরিবর্তনঃ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হয়।
৬। সার্জারিঃ জটিল ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ইউরিন ইনফেকশন দূর করার প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায়
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ
চোখের স্ট্রোক প্রতিরোধে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
২। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৩। ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা।
৪। সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রম করা।
৫। মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা।
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, চোখের স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও দ্রুত চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল থাকুন, কারণ চোখের সুস্থতা আমাদের জীবনযাত্রার মানকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url