মুসাফির কাকে বলে? সফরের নামাজ ও রোজার বিধান - ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে

মুসাফির কাকে বলে? সফরের নামাজ ও রোজার বিধান - ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে

আপনারা যারা ”মুসাফির কাকে বলে? সফরের নামাজ ও রোজার বিধান - ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে” এই সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, মুসাফির কাকে বলা হয়, তা অনেকেই জানেন না। শরীয়তের দৃষ্টিতে কত কিলোমিটার দূরত্বে গেলে কেউ মুসাফির হয়? সফরে নামাজের হুকুম কী? রোজা ভাঙা যাবে কি? বিস্তারিত জানুন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই আর্টিকেলে।

মুসাফির কাকে বলে? সফরের নামাজ ও রোজার বিধান – ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, মুসাফির কাকে বলে? সফরের নামাজ ও রোজার বিধান - ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত।

ভূমিকাঃ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভ্রমণ বা সফর একটি স্বাভাবিক বিষয়। কখনো চাকরির প্রয়োজনে, কখনো পরিবার বা ব্যক্তিগত কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া লাগে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সফরের বিষয়েও রয়েছে সুস্পষ্ট বিধান। ইসলামী শরীয়তে মুসাফির কে, কখন নামাজ কসর করতে হয়, সফরে রোজা রাখা বা ভেঙে ফেলার নিয়ম-এসব বিষয় জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রতিটি মুসলিমের জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো-মুসাফির কাকে বলে, সফরের শারঈ বিধান কী, এবং নামাজ ও রোজার ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা কী।

আরো পড়ুনঃ ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধির দোয়া - ধৈর্য ধারণ করার দোয়া আরবি

মুসাফির কাকে বলে?

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজ স্থায়ী বসবাসের স্থান থেকে কমপক্ষে ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে রওনা হন এবং ঐ স্থানে ১৫ দিনের কম সময় অবস্থান করার ইচ্ছা রাখেন। এমন ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে "মুসাফির" হিসেবে গণ্য হন। মুসাফিরদের জন্য নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে পড়ার (কসর), রমজানের রোজা ভেঙে পরে কাজা রোজা করার এবং কিছু ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করার সুযোগ রয়েছে। ইসলাম সফররত ব্যক্তির জন্য সহজ ও করুণাময় বিধান দিয়েছে।

দলিলঃ
নবী করিম (সা.) নিজেও ৪৮ মাইল বা তার বেশি দূরে সফরে গেলে নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) পড়তেন। (সহীহ বুখারী)

  1. সহীহ বুখারীর দলিল অনুযায়ী, নবী করিম (সা.) যখন নিজের শহর মদীনা থেকে দূরবর্তী স্থানে সফরে যেতেন, তখন তিনি চার রাকাত নামাজগুলো দুই রাকাতে সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, সফরে গেলে নামাজ কসর করার অনুমতি শরীয়তে রয়েছে।

  2. সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫-এ আল্লাহ বলেছেনঃ

    “আর তোমাদের কেউ যদি অসুস্থ বা সফরে থাকে, তবে সে অন্য দিনে রোজা পূরণ করবে।”
    এর থেকে বোঝা যায় যে, সফরে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। চাইলে সফরে রোজা না রেখে পরে কাজা করা যাবে।

  3. নবী করিম (সা.) বলেছেন,

    “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য যেসব সুবিধা দিয়েছেন, তা গ্রহণ করাই উত্তম।”
    (মুসলিম শরীফ)
    এ হাদীস থেকে জানা যায়, সফরের সময় নামাজ সংক্ষিপ্ত পড়া বা রোজা ভেঙে দেয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা-তাই তা গ্রহণ করলেই সওয়াব পাওয়া যায়। 

আরো পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রমাণিত আমল ! আয়-উপার্জনে বরকত আনুন (পর্ব ১)

মুসাফিরের নামাজের হুকুম

কসর নামাজ (সংক্ষিপ্তভাবে নামাজ পড়া):

ইসলামী শরীয়তে মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত পড়তে পারেন, একে কসর নামাজ বলা হয়। ফজর ও মাগরিবের নামাজ যেমন আছে তেমনই পড়তে হয়। কসর নামাজ মুসাফিরের জন্য সহজতা ও দয়ার বিধান। সফরের সময় কষ্ট ও সময় সংকটের কথা বিবেচনায় এনে আল্লাহ তাআলা এই সুবিধা দিয়েছেন। এটি শুধু অনুমতি নয়, বরং ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক-যতক্ষণ পর্যন্ত মুসাফির অবস্থায় থাকা হয়।

মুসাফিরের জন্য ফরজ নামাজগুলোর মধ্যে ৪ রাকাতবিশিষ্ট নামাজগুলোকে ২ রাকাতে পড়া ওয়াজিব।

নামাজ সাধারণ রাকাত     মুসাফিরের জন্য রাকাত
যোহর     
আসর                              
এশা     
ফজর     ২ (যেমন আছে)
মাগরিব     ৩ (যেমন আছে)

সুন্নাত ও নফলঃ

মুসাফির চাইলে মুসাফির অবস্থায় সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করতে পারেন, তবে বাধ্যতামূলক নয়। তবে ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রাসূল (সা.) সফরকালেও তা বাদ দিতেন না। অন্য সুন্নাত বা নফল নামাজ চাইলে পড়া যায়, কিন্তু না পড়লেও গোনাহ হবে না। মূলত সফরে নামাজের সহজীকরণের জন্য এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

মুসাফিরের রোজার বিধান

ইসলামে মুসাফিরের জন্য রমজানের রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি সফরে থাকে এবং রোজা রাখা তার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে সে রোজা না রেখে পরে তা কাযা করতে পারবে। আবার চাইলে রোজাও রাখতে পারে-এই দুটি অপশনই শরিয়তে অনুমোদিত। তবে যদি রোজা রাখা ক্লান্তিকর বা ক্ষতিকর হয়, তাহলে ভেঙে ফেলা উত্তম। আল্লাহ তা'আলা বান্দার কষ্ট চান না, বরং সুবিধা চান।

আল-কুরআনের ভাষায়ঃ
“তোমাদের কেউ অসুস্থ বা সফরে থাকলে, সে অন্য দিনে সেই রোজা পূরণ করবে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫)

অতএব, সফরে থাকলে রোজা রাখা না রাখা-উভয়টাই শরিয়তসম্মত, তবে কষ্ট হলে না রাখাই উত্তম।

দলিলঃ

“আর তোমাদের কেউ যদি অসুস্থ বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে রোজা পূরণ করবে।”
সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫

সফরে জুমার নামাজের বিধান

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে, সফরে থাকা ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ ফরজ নয়। অর্থাৎ, একজন মুসাফির চাইলে জুমার নামাজ না পড়ে যোহরের নামাজ দুই রাকাতে কসর করে আদায় করতে পারেন। তবে, যদি মুসাফির কোনো স্থানে পৌঁছে যান এবং সেখানে জুমার জামাত হচ্ছে-আর অংশগ্রহণে কোনো অসুবিধা না থাকে-তাহলে জুমায় শরিক হওয়া উত্তম ও সওয়াবের কাজ। কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং সফরের সময় জুমার নামাজ পড়া না পড়া মুসাফিরের জন্য শর্তসাপেক্ষে সহজ ও নমনীয় একটি বিধান।

আরো পড়ুনঃ নামাজে যে ১০টি ভুল অনেকেই করে থাকেন - মুসলমানদের জন্য জরুরি সতর্কতা।

সফরে ওজু ও তায়াম্মুম 

সফরে নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্রতা (তাহারাত) অপরিহার্য। যদি পানির ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ওজু করতে হবে। তবে অনেক সময় যাত্রাপথে পানি পাওয়া কঠিন হয় কিংবা অসুস্থতার কারণে ওজু করা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় ইসলাম তায়াম্মুমের অনুমতি দিয়েছে, যা মাটি বা ধূলিমাটির সাহায্যে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প ব্যবস্থা। এতে করে নামাজ আদায় বৈধ হয়।

তায়াম্মুম করার জন্য একটি নিখাদ ও পবিত্র মাটি, বালু বা ধূলা হতে হবে। দুই হাতে তা ছুঁয়ে একবার মুখ ও একবার হাত মাসেহ করলেই তায়াম্মুম সম্পন্ন হয়। এটি একটি সহজ ও দয়াপূর্ণ বিধান, যা ইসলাম সফররত ব্যক্তির সুবিধার্থে দিয়েছে।

সুতরাং, সফরে পানির অপ্রতুলতা বা শরীরিক অক্ষমতা থাকলে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা বৈধ ও শরীয়তসম্মত। এতে কোনো গোনাহ নেই, বরং তা আল্লাহর রহমতেরই বহিঃপ্রকাশ।

সফরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

ইসলামী শরীয়তে মুসাফির হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। সফরের শুরুতেই নিয়ত থাকতে হবে এবং ভ্রমণের দূরত্ব কমপক্ষে ৭৭ কিলোমিটার হতে হবে। সফরে যদি কেউ ১৫ দিনের কম অবস্থান করে, তাহলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে এবং নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) পড়বে। তবে সফরের স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। সফরের সময় শরীয়তের নির্দেশনা মেনে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পালন করাই একজন মুসলিমের দায়িত্ব।

আরো পড়ুনঃ সূরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াতের তাৎপর্য।

  • সফরের নিয়ত থাকতে হবে।

  • ৭৭ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্ব হতে হবে।

  • সফরে ১৫ দিনের কম অবস্থান হলে মুসাফির গণ্য হবেন।

  • মুসাফির অবস্থায় কোনো স্থানে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ আমি যদি নিজের বাড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে ১০ দিনের জন্য যাই, তাহলে কি আমি মুসাফির হবো?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আপনি মুসাফির হবেন এবং কসর নামাজ পড়তে পারবেন, কারণ সফরের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটারের বেশি এবং অবস্থান ১৫ দিনের কম।


প্রশ্নঃ সফরে গেলে কি রোজা ভাঙা যাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সফরে থাকলে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। পরে সে রোজার কাজা দিতে হবে। তবে কষ্ট না হলে রোজা রাখা উত্তম।


প্রশ্নঃ বাসে ভ্রমণকালে নামাজ কীভাবে পড়বো?
উত্তরঃ যদি বাস থামে, তবে নিচে নেমে কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়তে হবে। থামার সুযোগ না থাকলে ইশারায় নামাজ আদায় করা যাবে।


প্রশ্নঃ সফরে কি সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ সুন্নাত ও নফল নামাজ ফরজ নয়। তবে ফজরের সুন্নাত আদায় করা উত্তম এবং rewarded।


প্রশ্নঃ আমি যদি সফরের স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত করি, তাহলে কী করবো?
উত্তরঃ সে অবস্থায় আপনি মুসাফির থাকবেন না এবং পাঁচ ওয়াক্ত পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ইসরাইল কোন নবীর উপাধি - কোন নবীর উপাধি ছিল ইসরাইল


উপসংহারঃ

ইসলাম সফররত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত সহজ ও দয়াময় কিছু বিধান নির্ধারণ করেছে।  সফরে ক্লান্তি ও সময় সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে পড়ার সুযোগ, রোজা কাজা করার অনুমতি ও অন্যান্য সুবিধা সফরকে আরামদায়ক করে তোলে। তাই মুসাফির হিসেবে শরীয়তের নিয়মগুলো জানা এবং তা সঠিকভাবে অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। এতে করে আমরা আল্লাহর দেওয়া রাহমতের যথাযথ সম্মান দেখাতে পারি এবং সফরকালীন ইবাদতের সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারি।

আরও ইসলামিক আর্টিকেল পড়তে চাইলে জানাতে পারেন। www.baneswarit.com

আপনি যদি আরও এই ধরনের গাইড, টিপস বা টিউটোরিয়াল পড়তে চান, তাহলে আমাদের সাইটে চোখ রাখুন এবং নিয়মিত আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ 

https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159 ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url