রমজানের আগে নবীজি (সা.) যে ৫ প্রস্তুতি নিতেন তা বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন।
রমজানের আগে নবীজি (সা.) যে ৫ প্রস্তুতি নিতেন তা বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন।
আপনারা যারা রমজানের আগে নবীজি (সা.) যে ৫ প্রস্তুতি নিতেন এই সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন রমজানের আগমনের পূর্বে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন, তা আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। এই লেখায় রমজানের আগে তাঁর নেওয়া পাঁচটি মূল প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়েছে-ইবাদতের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি, রোজার আগাম পরিকল্পনা, কুরআন তিলাওয়াতে অধিক গুরুত্ব, দান-সদকা বাড়ানো এবং আত্মশুদ্ধির জন্য আত্মসমালোচনার চর্চা। এগুলো জানলে রমজানের প্রস্তুতি হবে আরো ফলপ্রসূ ও বরকতময় হবে সেই সম্পর্কে।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, রমজানের আগে নবীজি (সা.) যে ৫ প্রস্তুতি নিতেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।ভূমিকাঃ
রমজান হলো ইসলামের পবিত্রতম মাস, যা তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং এ মাসের আগমনের আগেই বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তাঁর এই প্রস্তুতিগুলো মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য।
নিচে রমজানের আগে নবীজি (সা.) যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলঃ
১। শাবান মাসে রোজা রাখাঃ
নবীজি (সা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন।
হাদিসঃ আয়েশা (রা.) বলেন-
"আমি নবী (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি কোনো মাসে নফল রোজা রাখতে দেখিনি।" (বুখারি, মুসলিম)
উদ্দেশ্যঃ
রমজানের দীর্ঘ রোজার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া
আত্মশুদ্ধি বৃদ্ধি করা
আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা
২। বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করাঃ
রমজানের আগমনের আগে নবী (সা.) অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।
উদাহরণঃ
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
কুরআন তিলাওয়াত করা
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা
বিশেষত, নবীজি (সা.) রমজানের আগমনের আগে এই দোয়াটি বেশি পড়তেন—
اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
"হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।" (আহমদ, তাবারানি)
৩। সদকা ও দান-খয়রাত বৃদ্ধি করাঃ
নবীজি (সা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে দান-সদকা বৃদ্ধি করতেন, যাতে গরিব-দুঃখী মানুষও রমজানকে আনন্দের সাথে পালন করতে পারে।
হাদিসঃ
"নবী (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজান মাসে তাঁর দানশীলতা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেত।" (বুখারি, মুসলিম)
উদ্দেশ্যঃ
অভাবী মানুষদের সাহায্য করা
পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা
৪। মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়াঃ
নবীজি (সা.) রমজানের আগে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিতেন, যাতে রমজানের ইবাদতগুলো সহজ হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকঃ
শরীরকে দীর্ঘ সময়ের রোজার জন্য প্রস্তুত করা
মনকে খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত করা
বেশি কথা বলা, গসিপ ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকা
ধৈর্যশীল হওয়া ও নফস নিয়ন্ত্রণ করা
নবীজি (সা.) বলেনঃ
"রোজা শুধু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করার নাম নয়, বরং অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা।" (বুখারি)
৫। রমজানের পরিকল্পনা করাঃ
রমজান যাতে সর্বোচ্চ ইবাদতের মাধ্যমে কাটানো যায়, তার জন্য নবীজি (সা.) পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করতেন।
কীভাবে পরিকল্পনা করা যায়?
কোন সময় কী কী ইবাদত করবেন তা ঠিক করা
বেশি কুরআন তিলাওয়াতের সিদ্ধান্ত নেওয়া
জিকির ও দোয়ার রুটিন ঠিক করা
লাইলাতুল কদরের রাতগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া
আরো পড়ুনঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর যুগে কোরবানির ঈদ ! ইতিহাস, সুন্নাহ ও করণীয়
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, নবীজি (সা.)-এর রমজানের প্রস্তুতিগুলো আমাদের জন্য অনুসরণীয়। শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখা, ইবাদত বাড়ানো, দান-সদকা করা, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং রমজানের পরিকল্পনা করা-এসব অভ্যাস গড়ে তুললে আমাদের রমজান আরও বরকতময় ও ফলপ্রসূ হবে।
আসুন, আমরা সবাই নবীজি (সা.)-এর অনুসরণে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং এই মাসটিকে সর্বোচ্চ ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোর সংকল্প গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন! আমিন!
https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159 ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url