ভোটার স্থানান্তর বা ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়ম | ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করুন সহজে (২০২৫)

ভোটার স্থানান্তর বা ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়ম | ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করুন সহজে (২০২৫)

আপনারা যারা "ভোটার স্থানান্তর বা ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়ম | ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন  (২০২৫)" সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, কিভাবে ভোটার আইডি কার্ডে ঠিকানা পরিবর্তন বা স্থানান্তর করবেন এবং আরো জানতে পারবেন, কিভাবে অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার স্থানান্তর করবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ধাপসমূহ সম্পর্কেভোটার স্থানান্তর বা ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়ম | ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করুন সহজে (২০২৫)চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, ভোটার স্থানান্তর বা ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ভূমিকাঃ

আপনি যদি নতুন এলাকায় বাসা পরিবর্তন করে থাকেন, অথবা চাকরির কারণে স্থায়ী ঠিকানা বদলাতে হয়েছে-তাহলে অবশ্যই ভোটার তালিকায় আপনার ঠিকানাটিও আপডেট করা দরকার। কারণ ভোটার আইডির ঠিকানা আপনার নাগরিকত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, কীভাবে খুব সহজে অনলাইনে বা অফলাইনে আপনার ভোটার স্থানান্তর বা ভোটার ঠিকানা পরিবর্তন করবেন। সহজ ভাষায়।

আরো পড়ুনঃ বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদন ২০২৫


ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের কারণগুলো কী হতে পারে?

অনেকে ভাবেন, ঠিকানা পরিবর্তন মানে শুধু নতুন এলাকায় ভোট দিতে যাওয়া! কিন্তু আসলে বিষয়টা সেরকম নয়, এখানে আরও অনেক কারণ আছে। নিচে সবচেয়ে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো। যেমনঃ
  • ১। বাসস্থান পরিবর্তন
এটাই সবচেয়ে সাধারণ কারণ। একজন ভোটার যদি এক থানা/ওয়ার্ড/জেলায় বা এক উপজেলা থেকে অন্য জায়গায় চলে যান, তাহলে তার ভোটার ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়।
  • ২। বিবাহ বা পরিবারের সঙ্গে থাকা
বিবাহের পর অনেক নারী তাদের স্বামীর ঠিকানায় চলে যান বা পরিবারভিত্তিক নতুন ঠিকানায় থাকেন — ফলে ভোটার ঠিকানাও পরিবর্তন করতে হয়।
  • ৩। চাকরি বা শিক্ষার কারণে স্থানান্তর
চাকরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য জেলা বা শহরে যেতে হলে অনেক সময় ভোটার আইডিতে নতুন ঠিকানা সংযোজন প্রয়োজন হয়।
  • ৪। পুরনো ঠিকানা ভুল ছিল
কখনো কখনো এনরোলমেন্টের সময় ভুলবশত ভুল ঠিকানা বা ভুল ওয়ার্ড লেখা হয় — এসব সংশোধনের জন্যও ঠিকানা পরিবর্তনের দরকার হয়।
  • ৫। ভোটাধিকার প্রয়োগে সুবিধা পাওয়ার জন্য
কেউ কেউ তাদের বাসস্থান অনুযায়ী এমন জায়গায় ভোটার হতে চান, যেখানে তারা নিয়মিত থাকেন বা ভোট দিতে যেতে সুবিধা হয়। তাই পুরনো ঠিকানা বাদ দিয়ে নতুন বর্তমান ঠিকানায় ভোটার হন।
  • ৬। একাধিকবার নিবন্ধনের কারণে একটিকে ধরে রাখা
কখনো ভুলবশত কেউ একাধিকবার ভোটার হয়ে গেলে, একটিকে রেখে অন্যটি বাতিল করার সময় ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • ৭। আইনি বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ
আদালতের নির্দেশ, সরকারি চাকরি বা অন্যান্য প্রশাসনিক কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করা হতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের মূল কারণ হলো বাসস্থান পরিবর্তন, তবে ব্যক্তিগত, সামাজিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত অনেক কারণও এর অন্তর্ভুক্ত।


ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য কোথায় আবেদন করবেন?

ভোটার ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে (Election Commission of Bangladesh)। তবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনেঅফিসে না গিয়ে অনলাইনে বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়েও করা যায়।

ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য আপনি তিন ভাবে আবেদন করতে পারেন। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ

১। অনলাইনে আবেদন (অনলাইনে ফরম পূরণ করে সাবমিট করা)

  • বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ
    https://services.nidw.gov.bd

  • এখানে লগইন করে “ঠিকানা পরিবর্তন” (Address Change) অপশন সিলেক্ট করে অনলাইন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করা যায়।

২। সরাসরি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন

  • আপনি যে ঠিকানায় ভোটার হতে চান, সেই উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন করা যায়।

  • প্রয়োজনে নির্বাচন অফিস থেকে ফরম-১৩ সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে হবে।

৩। আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস (যদি প্রয়োজন হয়)

  • জেলায় বা বিভাগে যদি আপনার ভোটার তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয় (যেমন সরকারি চাকরি, পাসপোর্ট ইত্যাদির জন্য), তাহলে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করাও নিরাপদ।

তিন ভাবেই আবেদনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে এখন অনলাইনে ঘরে বসে আবেদন করা যায় বলে অনেক সহজ হয়েছে।


অনলাইনে ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের ধাপসমূহঃ

১।  অনলাইনে সাইটে যান

২। লগইন করুন বা রেজিস্টার করুন

  • যদি আগেই অ্যাকাউন্ট করে থাকেন, তাহলে লগইন করুন।

  • যদি নতুন ব্যবহারকারী হন, তাহলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।

৩। আবেদন শুরু করুন

  • লগইনের পর “তথ্য হালনাগাদ” অপশনে ক্লিক করুন।

  • তারপর “ঠিকানা পরিবর্তন” বেছে নিন।

৪। নতুন ঠিকানা দিন

  • নতুন বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিন।

  • জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ইত্যাদি ঠিকভাবে দিন।

৫। কাগজপত্র আপলোড করুন

যে কাগজগুলো লাগবে (স্ক্যান কপি বা ছবি) ঃ

  • বাসার ভাড়ার রশিদ/জমির কাগজ/ইউনিয়ন পরিষদের সনদ

  • ন।গরিকত্ব সনদ (যদি প্রয়োজন হয়)

  • আপনার পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সফট কপি)

  • আগের NID কপি (সফট কপি)

৬। আবেদন সাবমিট করুন

সব তথ্য ঠিক থাকলে আবেদন সাবমিট করুন। সাবমিটের পর আপনি একটি Tracking Number পাবেন। এই ট্রাকিং নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখুন।ট

আরো পড়ুনঃ কাজের প্রতি মনোযোগে এই ৮টি বই বদলে দেবে আপনার জীবন – সাফল্যের পথ খুলে দিন আজই!


অফলাইনে (সরাসরি) আবেদন করার নিয়মঃ

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা অনলাইনে ঝামেলা করতে চান না। তাই তাদের জন্য সরাসরি অফিসে গিয়ে আবেদন করাও সম্ভব।

কী কী করতে হবে?

  • আপনার নিকটস্থ উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যান
  • নির্ধারিত ফরম-১৩ সংগ্রহ করুন (ভোটার তথ্য হালনাগাদ ফরম)
  • ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন
  • অফিসে জমা দিন

যেসব কাগজ লাগবেঃ

  • আগের NID কার্ড (ফটোকপি)
  • নতুন ঠিকানার প্রমাণ (ভাড়ার রশিদ/জমির দলিল/সনদ)
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি


কত দিনে ঠিকানা পরিবর্তন সম্পন্ন হয়?

অনলাইনে আবেদন করলে সাধারণত ১০-৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে এটি কিছু বিষয় অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে।

ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনে সময় লাগতে পারেঃ

ধাপআনুমানিক সময়
  • অনলাইনে আবেদন বা অফিসে ফর্ম জমা
  • ১–২ দিন
  • তথ্য যাচাই (ভিজিট বা কাগজ যাচাই)
  • ৫–১৫ দিন
  • নির্বাচন অফিসে অনুমোদন ও প্রসেসিং
  • ৭–১০ দিন
  • এনআইডি তথ্য আপডেট ও প্রকাশ
  • ৫–১০ দিন
  • প্রয়োজনে নতুন স্মার্টকার্ড প্রস্তুত (যদি করেন)
  • অতিরিক্ত ১৫–৩০ দিন

সময় বেশি বা কম লাগার কারণঃ

  • সঠিকভাবে ফরম পূরণ ও কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে কিনা
  • নতুন ঠিকানার এলাকা ও অফিসের কার্যক্ষমতা
  • তথ্য যাচাইয়ে ফিল্ড অফিসার পাওয়া যাচ্ছে কিনা
  • সাময়িক ব্যস্ততা (যেমন নির্বাচনের সময়)


আপনার করণীয়ঃ

  • অনলাইনে আবেদন করলে আবেদন আইডি বা ট্র্যাকিং নম্বরটি সংরক্ষণ করুন।

  • ১০–১৫ দিন পর সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন।

  • যদি খুব বেশি সময় লাগে, তাহলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে সরাসরি গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।


গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যঃ

  • অনলাইনে ঠিকানা পরিবর্তনের পর মাঝে মাঝে ভেরিফিকেশন টিম বাসায় আসতে পারে যাচাই করতে।
  • নতুন ঠিকানা অনুযায়ী আপনার ভোট কেন্দ্রও পরিবর্তিত হবে।
  • একইসাথে আপনি অন্য তথ্য (যেমন নামের ভুল, ছবি পরিবর্তন) ঠিক করতেও পারবেন।


জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্নঃ আমি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঠিকানা পরিবর্তন করেছি। ভোটার আইডিতে কী সেটি পরিবর্তন সম্ভব?

উত্তরঃ হ্যাঁ, সম্ভব। অনলাইনে আবেদন করলেই হবে।

প্রশ্নঃ ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য টাকা লাগে কি?

উত্তরঃ না, সরকারিভাবে এটি বিনামূল্যে। তবে কেউ যদি অন্যের মাধ্যমে করেন, সেক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ দিতে হতে পারে।

প্রশ্নঃ আমি ভোটারই নই। কিন্তু এখন নতুন ঠিকানায় ভোটার হতে চাই। কী করবো?

উত্তরঃ সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। আর তার সময় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ! সাফল্যের জন্য প্রস্তুতির সেরা গাইডলাইন সম্পর্কে জেনে নিন।


উপসংহারঃ

ভোটার ঠিকানা পরিবর্তন করা অনেক সহজ। আগের দিনের মতো আর লাইন ধরার কষ্ট নেই। আপনি চাইলে ঘরে বসে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ দিয়েই আবেদন করতে পারেন।

আপনি যদি স্থায়ীভাবে অন্য কোথাও চলে যান বা ভোটার আইডিতে সঠিক তথ্য না থাকে-তাহলে অবশ্যই এটি হালনাগাদ করুন। ভবিষ্যতে ব্যাংক, পাসপোর্ট, জমি রেজিস্ট্রি-সবখানে ভোটার ঠিকানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


লেখাটি শেয়ার করুনঃ

এই তথ্যভিত্তিক লেখাটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। অনেকেই এই বিষয়গুলো জানেন না- তাই তাদের জন্য হতে পারে এটি এক বড় সহায়তা।


আপনার যদি এই টপিক নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে সেটি জানাতে পারেন-আমি আপনাকে সাহায্য করব।

ভিজিট করুন- www.baneswarit.com

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url