ভিটামিন ডি ! ৫টি সাধারণ খাবার যা সূর্যের আলো ছাড়াও আপনার শরীরে ভিটামিন ডি পূরণে সাহায্য করে
ভিটামিন ডি ! ৫টি সাধারণ খাবার যা সূর্যের আলো ছাড়াও আপনার শরীরে ভিটামিন ডি পূরণে সাহায্য করে
আপনারা যারা "ভিটামিন ডি! ৫টি সাধারণ খাবার যা সূর্যের আলো ছাড়াও আপনার শরীরে ভিটামিন ডি পূরণে সাহায্য করে" এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, ভিটামিন ডি শরীরের হাড় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলো ছাড়া ঘরোয়া কিছু সাধারণ খাবার থেকেও আপনি ভিটামিন ডি পেতে পারেন। তাই জেনে নিন ৫টি সহজলভ্য খাবারের নাম যা আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে কার্যকর।
চলুন আর দেরি না করে আজকের আর্টিকেলে আমরা জেনে নেই ভিটামিন ডি! ৫টি সাধারণ খাবার যাতে সূর্যের আলোর চেয়েও ভিটামিন ডি বেশি থাকে সেই সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ ভিটামিন-ডি এর প্রাকৃতিক উৎস
আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যা হাড় মজবুত রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। সাধারণত সূর্যের আলো থেকেই আমরা প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাই। তবে, বর্তমানে ঘরবন্দী জীবনযাপন, দূষণ এবং সানস্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব তৈরি করছে। এই ঘাটতি পূরণে সূর্যের আলো ছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট খাবার হতে পারে কার্যকর সমাধান। চলুন জেনে নিই এমন ৫টি সহজলভ্য খাবার, যেগুলো ভিটামিন ডি-এর চমৎকার উৎস।
আরো পড়ুনঃ রক্তে কোলেস্টেরল ! কতদিন ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন? জেনে নিন বিস্তারিত।
১। মাছ - বিশেষত চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল)
চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, টুনা, হেরিং ও ম্যাকারেল হলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। বিশেষ করে যারা নিয়মিত রোদে থাকতে পারেন না বা সূর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পান না, তাদের জন্য এই মাছগুলো অত্যন্ত উপকারী।
স্যামন মাছের ১০০ গ্রাম অংশে গড়ে ৩৬০ IU থেকে ৬৮৫ IU পর্যন্ত ভিটামিন ডি থাকে, যা দৈনিক চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম। এছাড়া সার্ডিন ও ম্যাকারেল মাছেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এসব মাছ কেবল ভিটামিন ডি নয়, বরং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিনেরও দারুণ উৎস।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চর্বিযুক্ত মাছ খাদ্য তালিকায় রাখলে হাড় শক্ত থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। শিশু, বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি আরও বেশি কার্যকর।
এছাড়া যারা নিরামিষভোজী নন এবং সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে ভিটামিন ডি পেতে চান, তাদের জন্য চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ উপায়। চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন ডি-এর অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস।
২। ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুম হলো ভিটামিন ডি-এর একটি সহজলভ্য উৎস। একটি বড় ডিমের কুসুমে প্রায় ৩৭ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা শরীরে হাড় শক্ত করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে সেদ্ধ ডিম বা পোচ ডিম খাওয়ার অভ্যাস শরীরের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকলেও, কুসুমে থাকে ভিটামিন ডি।
খাওয়ার পরামর্শঃ সকালের নাস্তায় সেদ্ধ ডিম বা পোচ ডিম নিয়মিত গ্রহণ করুন। তবে কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই ও পনিরে সাধারণত সামান্য ভিটামিন ডি থাকে, তবে অনেক দেশেই (ফোর্টিফায়েড) দুধে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি যোগ করা হয়। এক গ্লাস ফোর্টিফায়েড দুধে প্রায় ১২০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ বা দই রাখলে শরীরের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা সম্ভব। পনির ও ঘন দই থেকেও সামান্য পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি প্রাকৃতিকভাবে বাড়ানোর ৮টি সহজ ও কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
৪। মাশরুম (সানলাইট এক্সপোজড)
সূর্যের আলোতে বিশেষভাবে সংস্পর্শে রাখা মাশরুম (UV-এক্সপোজড) ভিটামিন ডি-এর একটি প্রাকৃতিক উৎস। এটি ভিটামিন D2 তৈরি করে, যা শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। নিয়মিত এই ধরনের মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখলে সূর্যের আলোর অভাবে তৈরি হওয়া ভিটামিন ডি-এর অভাব অনেকটাই দূর করা সম্ভব।
সবজি হলেও কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির মাশরুম সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে UV সূর্যের আলোয় এক্সপোজড মাশরুমে থাকে ভিটামিন D2, যা শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। তবে বাজার থেকে কেনার আগে নিশ্চিত হোন সেটি UV-এক্সপোজড কি না।
৫। ফিশ লিভার অয়েল (কড লিভার অয়েল)
কড লিভার অয়েল হলো মাছের যকৃৎ (বিশেষত কড মাছের) থেকে সংগ্রহ করা একটি তেল, যা ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন এ-এর অত্যন্ত সমৃদ্ধ উৎস। এটি ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক টেবিল চামচ কড লিভার অয়েলে প্রায় ১,৩৬০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা দৈনিক চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর। এটি ভিটামিন এ-তেও সমৃদ্ধ, তাই অতিরিক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।তবে অতিরিক্ত গ্রহণে ভিটামিন এ-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করাই ভালো।
আরো পড়ুনঃ শজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা – জানলে আপনি অবাক হবেন। এখনি জেনে নিন।
অতিরিক্ত কিছু টিপস (Bonus Tips):
- প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকার চেষ্টা করুন (সকাল ৮–১০টা)
- সূর্যের আলো সরাসরি ত্বকে লাগা জরুরি (কমপক্ষে মুখ, হাত খোলা থাকা দরকার)
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, ভিটামিন ডি শরীরের হাড় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। আজকের ব্যস্ত জীবনে রোদে বসে থাকা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করে আমরা সহজেই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি। স্যামন মাছ, ডিম, দুধ, মাশরুম বা ফিশ অয়েল-এ সবই হতে পারে আপনার শরীরের প্রাকৃতিক সাপোর্ট সিস্টেম। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
আরও এমন আর্টিকেল পড়তে চাইলে জানাতে পারেন আমি লিখে দেব। প্রতিনিয়ত এরকম নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুনঃ
https://www.facebook.com/profile.php?id=61577238192159
যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url